অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন না হলে অসংক্রামক রোগ রোধ করা সম্ভব না। বিশিষ্টজনরা বলছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু হলে অসংক্রামক রোগ ঠেকানোর একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার ২৭ জানুয়ারি প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ পর্বের আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টাস ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় এই পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ মানে অছোঁয়াচে রোগ-বালাই। আমার এখন ছোঁয়াচে রোগের ধাক্কায় আছি। করোনা ছোঁয়াচে রোগ। রোগ যাতে না হয় সেই জন্য সম্মেলন। আমরা রোগ যদি আটকাতে পারি তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। অছোঁয়াচে রোগে যত মানুষ মারা যায় ছোঁয়াচে রোগে তত মারা যায় না।’
ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার ২৬ জানুয়ারি। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাটা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ৫ থেকে ৭ বছর লাগবে। আগামী বাজেট থেকে যদি আমরা বাড়তি বরাদ্দ শুরু করি, তাহলে ৫ বছরে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে এই অসংক্রামক রোগ-বালাই ঠেকানোর একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
এই পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদি, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোমেন রাইহান।
প্যানেল আলোচক ছিলেন ইএএসডি এর উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার, সিডার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. জহিরুল ইসলাম, ব্রিটিশ হাই কমিশনের হেলথ অ্যাডভাইজার ডা. শফিকুল ইসলাম।
এই পর্বের সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির বৈজ্ঞানিক সেক্রেটারি ডা. আলেয়া নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হতে হবে। তা না হলে রোধ করা সম্ভব না। তাই আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
ডা. সামিউল ইসলাম সাদি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত। আমরা যদি জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আনি তাহলেই কিন্তু এটা থেকে অনেকাংশে ভালো থাকতে পারি।
‘আমরা যদি নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ না করি, ধূমপান পরিহার না করি, হাঁটাচলা না করি, ব্যায়াম না করি, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পরি, তাহলে হাসপাতাল তৈরি করে কখনো রোগীর চাপ সামাল দিতে পারব না।’
রোগ প্রতিরোধে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রোগ এবং রোগের চিকিৎসায় গুরুত্ব দেই। কিন্তু রোগের প্রতিরোধের যে বিষয় আছে, আমরা যদি সেই দিকে গুরুত্ব দেই তাহলে আমার অনেক সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পরব।
‘প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়। ক্যান্সারের বেলায় আমরা খুব দেরিতে ডায়গনেসিস করি। তখন আর কিছু করার থাকে না।’
বায়ু দূষণের কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি উল্লেখ করে ডা. সামিউল ইসলাম সাদি বলেন, ‘৩০ শতাংশ বায়ু দূষণ পাশ্ববর্তী দেশ থেকে এসে থাকে। আমার যদি অসংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে না নামি তাহলে এর ব্যাপকতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এর ব্যাপকতা রোধ করা সম্ভব না।’
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এই পর্বে জুমে যুক্ত হয়ে ‘কি নোট’ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা দেখা দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সাংবাদিকতার গুরুত্ব ছিল না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির রিপোর্ট ছাড়া স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুসন্ধানী রিপোর্ট খুব একটা চোখে পড়ে না।
‘এর কারণও আছে। যে ধরনের প্রশিক্ষণ পাওয়া দরকার সাস্থ্য সাংবাদিকরা সেই ধরনের প্রশিক্ষণ পায় না। এনসিডির বিরুদ্ধে আমাদের দেশে তেমন কোনো আন্দোলন নেই। চোখে পড়ে না। ডায়বেটিস নিয়ে কিছুটা চোখে পড়ে।’
ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘মানুষের গড় আয়ু বাড়ায় অসংক্রামক রোগসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। নতুন নতুন রোগও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। আমাদের দেশ ছোট, মানুষ বেশি হওয়ার কারণে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’