logo
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৪:৫৭
শাহজালালে করোনা রিপোর্ট নিয়ে নয়-ছয়
ইদ্রিস আলম

শাহজালালে করোনা রিপোর্ট নিয়ে নয়-ছয়

সময়কাল মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা। বাইরে নেগেটিভ, ভেতরে পজিটিভ। অবাক মনে হলেও এটাই যার বাস্তব চিত্র। টাকার বিনিময়ে কেনা সার্টিফিকেট নাকি সত্য, বোঝা বড্ড মশকিল! পজিটিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেডি অ্যাম্বুলেন্স। এসবই ঘটছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এমন বিড়ম্বনায় যেমন অসহায়-গরিব মানুষের গচ্চা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা, তেমনই স্বপ্ন ভাঙছে হাজারো দরিদ্র পরিবারের। সেইসঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে বিদেশগমন।

বেসরকারি হাসপাতালে করোনা নেগেটিভ। কিন্তু মাত্র ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে শাহজালালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে এসে সেই করোনা রিপোর্ট হয়ে যায় পজিটিভ! এ নিয়ে সরগরম এখন পুরো বিমানবন্দর এলাকা। এমন ঘটনার দায় কার? আরটি-পিসিআর ল্যাব নাকি প্রাইভেট হাসপাতাল? নাকি টাকার বিনিময়ে পজিটিভ রিপোর্ট নেগেটিভ করে নিয়ে আসছেন। কোনো সুরাহা মেলেনি এখন পর্যন্ত। এর সমাধান চান যাত্রীরা।
সম্প্রতি সরেজমিন বিমানবন্দর এলাকায় দেখা যায় এমন চিত্র। একজন-দুজন নয়, এমন অভিযোগ শত শত রেমিট্যান্সযোদ্ধার। এ নিয়ে প্রবাসী যাত্রীরা হতাশায় পড়েছেন।


দীর্ঘ এক মাস পার হলেও সেই পূর্বের সমস্যা করোনা টেস্টের জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রিপোর্ট নিয়ে সমস্যা। এমনই এক ভুক্তভোগী রাশেদা বেগম। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে এসেছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে, গৃহকর্মীর ভিসায় আরব আমিরাতে যাবেন বলে। গত ২৫ জানুয়ারি আর্মি স্টেডিয়ামে স্যাম্পল দেন। পরে করোনা রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। সেই অনুযায়ী, বিমানবন্দরে আসেন নির্দিষ্ট ফ্লাইটের জন্য। কিন্তু বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবে এসে সেই রিপোর্ট হয়ে যায় পজিটিভ। সেখান থেকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় কোয়ারেন্টাইনে। সাক্ষাৎ করার সুযোগ নেই স্বজনের সঙ্গেও।


বড় ভাইকে নিয়ে রংপুর থেকে এসেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বাইরে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। কিন্তু এখানে এসে তারা পরীক্ষা করে বলছেন পজিটিভ। এটা কোন ধরনের কথা? মাত্র ৪-৫ ঘণ্টায় রিপোর্ট পরিবর্তন হয় নাকি?’ তিনি আরো বলেন, ‘এ রিপোর্টটা যদি আমরা সঠিকভাবে পেতাম বা এখান থেকে করানো হতো, তাহলে এমন হয়রানির শিকার হতে হতো না আমাদের। এই যে দেখেন, কতগুলো টাকা লাগছে। আমরা তো গরিব মানুষ, তাই না। এখন ভাইকে নিয়ে গেল অ্যাম্বুলেন্সে করে। আমরা এখন বাড়ি ফিরে যাব, তাহলে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার টিকিট মাইর হয়ে গেল।’


একই অভিযোগ করছেন ছেলেকে নিয়ে আসা নাসিমা বেগম নামে অপর এক ভুক্তভোগী নারী। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, ‘আপনারাই সমাধান করে দেন, হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। আগেই বলে দিত করোনা রিপোর্ট পজিটিভ। তাহলে এতগুলো মানুষকে ফিরে যেতে হতো না।’ তিনি আরো জানান, ‘আমরা তো গরিব মানুষ। দিনমুজর করে চলি। ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর আশায় এসেছি। বাইরে করোনা পরীক্ষা করালাম রিপোর্ট এলো নেগেটিভ আর এখানে এসে রিপোর্ট হলো পজিটিভ। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। কত টাকার ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। টিকিটের টাকা তো ফেরত দেয় না।’


নোয়াখালী থেকে খালেকুজ্জামান গত রাত (বৃহস্পতিবার) ১টার দিকে ছেলেকে নিয়ে আসেন বিমানবন্দরে। তখন থেকে সকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে কেটেছে সময়। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ যাত্রীরা। দেখা গেছে, মশা থেকে রক্ষা পেতে পায়ে পলিথিন বেঁধে নিয়েছেন অনেকেই। এমন অব্যবস্থাপনার কথা অনেক আগে থেকেই বলা হলেও উদাসীন কর্তৃপক্ষ। আরব আমিরাতপ্রবাসী মোখলেছুর রহমান। তিনি ভোরের আকাশকে জানান, ‘যেভাবে টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে, তা বলার ভাষা নেই। হঠাৎ কেন এত দাম বেড়েছে, বলতে পারছে না কেউ। এটি একটি সিন্ডিকেট করছে বলে মনে করি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের, যা দেখার কেউ নেই।’


শামীম হোসেন নামে একজন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আরব আমিরাত যাবেন বলে বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছেন একদিন আগে। কিন্তু আদম অফিসে এসে শোনেন, তার ফ্লাইট ঢাকা থেকে হবে না। যেতে হবেন চট্টগ্রামে। সময় আছে মাত্র ৮-৯ ঘণ্টা। টিকিটের দাম বেশি হওয়ার কারণে এমন ভোগান্তি। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে ঠিকই টিকিটের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।’ এমন ভোগান্তির কথা জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে করোনার সুরক্ষা নিয়ে প্রবেশ করার কথা আমরা বলে দিয়েছি। যেমন মাস্ক পরে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড সানিটাইজার সঙ্গে থাকতে হবে।’ করোনার সার্টিফিকেট বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি দেখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’