logo
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ ১৪:০০
বিষমুক্ত সবজির গ্রাম মুশুদ্দি
জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল

বিষমুক্ত সবজির গ্রাম মুশুদ্দি

সুজন মিয়া নামের একজন কৃষক মুশুদ্দি গ্রামে নিজ সবজি ক্ষেতে কাজ করছেন

চারদিকে সবুজ আর সবুজ। ক্ষেত জুড়ে রয়েছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, বেগুন, শিম, শসা, চিচিংগা, বরবটিসহ আরো নানা ধরনের সবজি। বিষমুক্ত এসব সবজি চাষ করে সাড়া জাগিয়েছেন কৃষকরা। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠ জুড়ে রয়েছে এসব সবজির ক্ষেত। মূলত ইউনিয়নটি ‘বিষমুক্ত’ নিরাপদ সবজির জন্য পরিচিত।

এখানকার সবজি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুশুদ্দি ইউনিয়নটি কৃষিনির্ভর এলাকা। এখানকার কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছেন। ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন, জমাচ্ছেন টাকা, নির্মাণ করছেন বাড়িঘর।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ধনবাড়ী উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মুশুদ্দি ইউনিয়নে ১০৩ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে মুশুদ্দি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, সবজি আবাদের জন্য মাঠে নারী ও পুরুষরা এক সঙ্গে কাজ করছেন। মাঠ জুড়ে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, শিম, শসা, চিচিংগা, বরবটি, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লাউশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন রকমের সবজি পর্যায়ক্রমে আবাদ করা হচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে। পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমিও ও আলোর ফাঁদ। কম্পোস্ট ও জৈবসার ব্যবহারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠছে সবজির চারা।

কিছু কিছু ক্ষেত থেকে সরাসরি সবজি সংগ্রহ করছে পাইকাররা। এতে কৃষকদের পরিবহন খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। আর সবজির ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।

কামাড়পাড়া গ্রামের কৃষক আ. রাজ্জাক (৪৩) বলেন, ‘আমি ১৫ বছর যাবৎ বিষমুক্ত সবজি আবাদ করছি। চলতি মৌসুমে ৭৫ শতাংশ জমিতে শিম, লাউ, বেগুন, করলা ও পটল আবাদ করেছি। সকল খরচ বাদে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা থাকে।’

কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘শুধু আমিই না, আমার মতো যারা সবজি আবাদ করে সকলেরই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। একসময় আমরা এ এলাকায় শুধু ধান চাষ করতাম। ধান চাষের চেয়ে সবজি আবাদে পাঁচ গুণ লাভ বেশি। আয়ের টাকায় বাড়িতে দালান করেছি। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি।’

কৃষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ সবজি আবাদে আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় অনেক কষ্টে দিন পার করতাম। শুধু আমিই না ইউনিয়নের শতশত কৃষক এখন স্বাবলম্বী।’

মুশুদ্দি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘এ ইউনিয়নটি মূলত সবজি প্রধান এলাকা। কৃষকরা বছরজুড়ে সকল ধরনের সবজি আবাদ করে। মাঠে গিয়ে তাদের সব সময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে সকল ধরনের পরামর্শ ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ওই এলাকার মাটি খুবই উর্বর। সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিষমুক্ত সবজি আবাদ করে মুশুদ্দি ইউনিয়নের কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।