logo
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৫৪
২১৮ ইউপিতে ভোট শেষে চলছে গণনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

২১৮ ইউপিতে ভোট শেষে চলছে গণনা

কুড়িগ্রামের এক কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন। ছবি- ভোরের আকাশ

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে দেশের ২১৮টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। কড়া নিরাপত্তায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তারপর শুরু হয় গণনা।

এ ধাপে দেশের ২১৮টি ইউপির মধ্যে ২১৬টিতে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়; বাকি দুটিতে নেওয়া হয় ব্যালট পেপারে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ দফায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনের আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৪ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১২, সংরক্ষিত আসনে ৩২ এবং সাধারণ সদস্য পদে ১০০ জন। 

সোমবারের ভোট সামনে রেখে সব কেন্দ্রেই ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ধাপে ২১৯টি ইউপিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। ১৪ জানুয়ারি থেকে এসব এলাকার প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। নির্বাচনী প্রচারকালে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৫ মাসে নির্বাচনী সংঘাত ও হানাহানিতে সারা দেশে ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।

একই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে এক প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আর চুয়াডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ অবস্থার মধ্যে সোমবার হচ্ছে ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে সরকারদলীয় প্রার্থী এবং দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মধ্যে মূলত বেশিরভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব প্রার্থীদের পেছনে সক্রিয় সমর্থন রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

নওগাাঁর এক কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন। ছবি- ভোরের আকাশ

এর আগে প্রথম থেকে পঞ্চম দফা নির্বাচনসহ সব নির্বাচনেই কমবেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে। এ দুই ধাপে যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন নিহত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে দুই ভাগে নির্বাচন হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নির্বাচন হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত তখন থেকেই সারা দেশে নির্বাচন ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দেয়।

প্রথম ধাপে ৫ জন, চতুর্থ ধাপে ১০, পঞ্চম ধাপে ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ষষ্ঠ দফায় চেয়ারম্যান, সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্যসহ মোট প্রার্থী রয়েছেন ১১ হাজার ৬০৪ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ১ হাজার ১৯৯ জন, সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থী ২ হাজার ৫৫৯ জন এবং সাধারণ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন ৭ হাজার ৮৪৬ জন।

২২ জেলার ৪২ উপজেলার ২১৮ ইউপিতে নির্বাচনের জন্য মোট ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে ২ হাজার ১৮৬টি। বুথ রয়েছে ১৩ হাজার ৩০৫টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৪১ লাখ ৮২ হাজার ২৬৩। পুরুষ ভোটার ২১ লাখ ১৪ হাজার ৭২০ এবং মহিলা ভোটার ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ জন।

নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আচরণবিধি প্রতিপালন, নির্বাচনী অপরাধ বিচারের জন্য বিচারিক এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে মোতায়েন করা হয়েছে একটি করে মোবাইল ফোর্স, দুটি করে স্টাইকিং ফোর্স।

এছাড়া প্রতি উপজেলায় র‌্যাবের একটি করে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স, বিজিবির ২ প্লাটুন করে ২টি মোবাইল ফোর্স ও এক প্লাটুনের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রতিটি উপকূলীয় উপজেলায় কোস্ট গার্ডের ২ প্লাটুনের ২টি মোবাইল টিম এবং এক প্লাটুনেরর একটি স্টাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

এবার শুরু থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের হিড়িক চলছে। সোমবার ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ১৪৪ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ১২ প্রার্থী। 

এর আগে পঞ্চম ধাপে ১৯৩, চতুর্থ ধাপে ২৯৫, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯, দ্বিতীয় ধাপে ৩৬০ ও প্রথম ধাপে ১৩৮ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।