logo
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৭
বরিশালে জানুয়ারিতে সড়কে ঝরল ১৫ প্রাণ
জহির রায়হান, বরিশাল ব্যুরো

বরিশালে জানুয়ারিতে সড়কে ঝরল ১৫ প্রাণ

দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ডভ্যান

বরিশাল জেলাজুড়ে জানুয়ারি মাসে ১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ সাতজন, নারী দুইজন ও শিশু ৩ জন রয়েছে। আর আহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) শাহজাহান হোসেন।
বরিশাল জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট ১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে এক জানুয়ারি রাতে বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুর এলাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল পরিবহনের ট্রলি সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে চালক রমজান আলী (২৬) মারা যান।

একই তারিখ ভোরে গৌরনদীর আশোকাঠি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় শহিদুল হক খান নামে এক শ্রমিক মারা গেছেন। শহিদুল পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার কেশবকাঠী গ্রামের নুর হোসেন খানের ছেলে।

দুই জানুয়ারি বরিশাল জেলার মুলাদীর মীরগঞ্জ সড়কের কাজিরহাট ঈদগাহ সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- বড়ইয়া কাজিরচর এলাকার ইদ্রিস হাওলাদার (৬০), একই এলাকার হারুন নলী (৪৫) ও ওমানপ্রবাসী রাজীব নলী (২৩)। মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান এ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

একই তারিখে বাকেরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা এলাকায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রনজিৎ দাস নামে এক বাসযাত্রী মারা যান ও ১২ জন আহত হন।

পাঁচ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর বার্থী গ্রামের সজিবুর রহমান নামে এক যুবকের বেপরোয়াগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে পুষ্প রাণী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
একই তারিখের সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার সাউদেরখালপাড় নামক এলাকায় হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের চাপায় রাশিদা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধা পথচারী নিহত হয়েছেন। নিহত রাশিদা গৌরনদী উপজেলার সাউদেরখাল গ্রামের আব্দুস সালাম মাঝির স্ত্রী।

এছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টায় বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বাসচাপায় আসলাম হাওলাদার (৩২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।

আট জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সোলায়মান মোল্লা (৩৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন।
১৪ জানুয়ারি দুপুরে মুলাদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় উপজেলার দরিচর লক্ষ্মীপুর এলাকার শফিক ঘরামীর ছেলে নীরবের (১২) মৃত্যু হয়।

২৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে আগৈলঝাড়া-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের পশ্চিমপাড় এলাকার মোড়ে গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল চালক হোসেন সিকদার (২৫) মারা যান।
একই তারিখে বানারীপাড়ায় রাস্তা পারাপারের সময় ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এমদাদুল হক (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে জেলার বানারীপাড়া উপজেলার কচুয়া সুলতানা রাজিয়া বিদ্যা নিকেতনের শিশু শ্রেণির ছাত্র ছিল।

২৬ জানুয়ারি সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী কলেজের সামনে বাসচাপায় বার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরেক স্কুলছাত্র। তিনজনই করোনার টিকাগ্রহণের জন্য মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিল বলে জানান গৌরনদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন।

২৮ জানুয়ারি ভোর রাতে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নে ডাবেরকুল স্কুল সংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙে ভেকু মেশিনসহ লরি খালে পড়ে যায়। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।

একই তারিখ রাত ৯টার দিকে বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও প্যাডেল চালিত রিকশাকে চাপা দেয় সাকুরা পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস। এতে চারজন আহত হন। তবে অন্য লোকাল পরিবহনের হেলপার এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি সাকুরা পরিবহন কর্তৃপক্ষের।

বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক বিধান সরকার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কগুলোতে স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) স্থাপন না করাই ভালো। কারণ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে গতি বেশি থাকে। হঠাৎ স্পিড ব্রেকার চোখে না পড়লে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা বেশি হয়। আর যদি স্পিড ব্রেকার প্রয়োজন হয় তাহলে জেব্রাক্রসিং বা সংকেত চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সড়কের পাশে হাটবাজার বসে। তাতে প্রায় সময়ই পথচারীদের মৃত্যু হয়। তাই সড়কের পাশে বসা হাটবাজার সরিয়ে অন্তত ১৮-২০ ফুট দূরে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি সকলের ট্রাফিক আইন মেনে চলাচল করা উচিত।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) শাহজাহান হোসেন জানান, তারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবার প্রথমে চালক-হেলপার ও যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। সড়কের আইন মেনে যানবাহন চলাচল করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে।