logo
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ২২:০১
টাইমলাইনে মেজর (অব.) সিনহা হত্যামামলার রায়
ভোরের আকাশ ডেস্ক

 টাইমলাইনে মেজর (অব.) সিনহা হত্যামামলার রায়

মেজর (অব.) সিনহা

২০২০ সালের ৩১ জুলাই  শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সে ঘটনার পর নানা চাপান উতোড় চলে স্থানীয় থানা পুলিশ ও এপিবিএন এর মধ্যে। বিক্ষুব্ধ হয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার পর সেনা প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো সামাল দেন। মেজর (অব.) সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এরপর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ, এসআই লিয়াকতসহ অপর ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিচার কাজ। অভিযুক্ত হওয়ায় তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বরখাস্তও করা হয়। এরপর টানা দেড় বছর মামলার তদন্ত, অভিযোগ দায়ের ও বিচার কাজ শেষে ৩১ জানুয়ারি ২০২২ এ মামলার রায় ঘোষিত হলো। একনজরে দেখে নেওয়া যাক পুরো ঘটনাটি:

৩১ জুলাই, ২০২০:  কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

০১ আগস্ট, ২০২০: শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন, মেজর (অব.) সিনহা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে এক সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। পুলিশ দাবি করে, গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কিছু গাঁজা ও দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ নিহত সেনা কর্মকর্তার পিস্তলটি জব্দ করেছে।

এদিকে, তাদের দাবি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘটনাটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

০২ আগস্ট, ২০২০: কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, আইজিপির নির্দেশে, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৬ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।

একইদিনে ঘটনাটি তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (চট্টগ্রাম বিভাগ) ও যুগ্মসচিব মিজানুর রহমান। কমিটির অন্য ৩ সদস্য হলেন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, উপপুলিশ মহাপরিদর্শকের (চট্টগ্রাম রেঞ্জ) প্রতিনিধি ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলী।

 

০৪ আগস্ট, ২০২০: কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি। কক্সবাজার সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এক সমন্বয় সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান জানান, এই ঘটনার একটি নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। নিরপেক্ষতার স্বার্থে কমিটিতে বদল আনা হয়। ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আসেন। 

০৫ আগস্ট, ২০২০: টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যামামলা দায়ের করা হয়। বুধবার (৫ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

মামলা দায়েরের পর গণমাধ্যমে কথা বলেন নিহতের বোন ও বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। (ফাইল ছবি)

 

টেকনাফ থানার ওসি ছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, এসআই টুটুল, কনস্টেবল মো. মোস্তফা। তারা সবাই টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ওইদিন রাতে কর্মরত ছিলেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানাকে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য র‌্যাবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ৩১ জুলাই রাতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিওচিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছান। এ সময়  ১নং আসামি লিয়াকত ও ৩নং আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ির গতিরোধ করলে মেজর সিনহা নিজের পরিচয় দেন। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টানা-হেঁচড়া করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। এ সময় সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়িতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেন। পরিচয় দেওয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, ‘তোর মতো মেজর অনেক দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। মুহূর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যান। এ সময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে লিয়াকত মৃত্যু ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য ইয়াবা, গাঁজা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে দুটি মামলা দায়ের করে।

মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘ওসি প্রদীপের নির্দেশনা মতে এসআই লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় অন্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি চাই আমার ভাইয়ের হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসুক। দোষিদের শাস্তি কামনা করছি।’

০৫ আগস্ট, ২০২০: মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনা ও পুলিশ প্রধান একইসঙ্গে কক্সবাজার সফরে আসেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি পেতে হবে বলে মন্তব্য করেন উভয় বাহিনীর শীর্ষ দুই কর্মকর্তা।

মেজর (অব.) সিনহা হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন সেনাপ্রধান ও আইজিপি। (ফাইল ছবি)

 

একই রাতে নিজ থানায় (টেকনাফ থানায়) ওসি প্রদীপকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়।  আদালতের নির্দেশে মামলাটি থানায় নথিভুক্ত করা হয়।

০৬ আগস্ট, ২০২০: সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা হত্যামামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হন। তারা প্রত্যেকে আত্মসমর্পণ করেন।

তাদের চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ হেফাজতে ওসি প্রদীপকে কক্সবাজারে আনা হয়। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মেজর (অব.) সিনহা। ৩১ জুলাই তাকে হত্যা করা হয়। (ফাইল ছবি)

 

০৬ আগস্ট, ২০২০: ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর স্থানীয়রা একে একে প্রকাশ করতে থাকেন তার বিরুদ্ধে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনেকে দাবি করেন, আসামি হিসেবে ধরে এনে ‘ক্রসফায়ার’ দেবেন না এমন শর্তে ঘুষ নিতেন ওসি প্রদীপ। একইদিন তদন্ত কমিটির সদস্যরা টেকনাফ সফর করেন।

অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিকভাবে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। ওসি প্রদীপসহ ৩ আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৪ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

০৭ আগস্ট, ২০২০: ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করে র‌্যাব। কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান। তিনি বলেছেন, ‘প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি।’

একইদিনে ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।

০৮ আগস্ট, ২০২০: সিনহা হত্যা মামলায় চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়।

০৯ আগস্ট, ২০২০: মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার পর পুলিশের দায়ের করা মামলায় তার সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে আসামি করা হয়। তবে সিনহার বোন মামলা দায়েরের পর ওসি প্রদীপসহ অন্যরা কারাগারে গেলে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান শিপ্রা দেবনাথ। এদিন, গণমাধ্যমে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন টেকনাফ থানার তিন তলায় ‘টর্চার সেল’ বানিয়েছিল ‘ওসির টিম’!কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহা রাশেদ খানের সঙ্গে তথ্যচিত্র নির্মাণকাজে অংশ নেয় স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত ও শিপ্রা। সিফাতের আইনজীবীরাও জাবিনের আবেদন করেন।

১০ আগস্ট, ২০২০: জামিন পান সিফাত, মামলার তদন্ত ভার পায় র‍্যাব

১১ আগস্ট, ২০২০: সিনহাকে হত্যার পর করা পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী গ্রেফতার

১২ আগস্ট, ২০২০: ৪ পুলিশ সদস্য ও ৩ সাক্ষীর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

১৩ আগস্ট, ২০২০: মহেশখালীতে ওসি প্রদীপসহ ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার পর বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমারের বিরুদ্ধে এটি পৃথক হত্যামামলা।

১৪ আগস্ট, ২০২০: এ হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামি—চার পুলিশ সদস্য এবং ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়।

১৫ আগস্ট, ২০২০: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)সহ র‌্যাবের একটি দল কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর এপিবিএন পুলিশের চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন।

 বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকত। ঘটনার শুরু থেকেই তাদের দিকেই সবাই আঙুল তুলে ছিল। রায়েও এর প্রতিফলন দেখা
গেছে। (ছবিটি তাদের দায়িত্বকালীন সময়ের।)

 

১৬ আগস্ট, ২০২০: গণশুনানি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি।

১৭ আগস্ট, ২০২০: আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি।

১৮ আগস্ট, ২০২০: ৩ এপিবিএন সদস্যের ৭ দিনের রিমান্ড। ওসি প্রদীপসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের। এদিন, ওসি প্রদীপসহ ৩ জনকে হেফাজতে নেয়  র‌্যাব।

২০ আগস্ট, ২০২০: রিমান্ড শেষে ৭ আসামি কারাগারে পাঠানো হয়।

২১ আগস্ট, ২০২০: ঘটনাস্থলে নেওয়া হয় তিন প্রধান আসামি ওসি প্রদীপ, সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপ-পরিদর্শক নন্দদুলাল রক্ষিতকে। অন্যদিকে, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার হত্যাকাণ্ডস্থল ঘুরে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, মেজর সিনহাকে গুলিবর্ষণের পুরো ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই।

২২ আগস্ট, ২০২০: ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামির ফের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

২৫ আগস্ট, ২০২০: ৩ সাক্ষীর ফের ৪ দিনের রিমান্ড

২৬ আগস্ট, ২০২০: ওসি প্রদীপসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের হয় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালত (টেকনাফ)-এ।

২৭ আগস্ট ২০২০: ওসি প্রদীপসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। একইদিনে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের দুই সদস্যকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আদালতে আনা হয়।

২৮ আগস্ট, ২০২০: প্রদীপসহ তিন আসামি তৃতীয় দফা রিমান্ডে। এর আগে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মুখ খোলেন দুই এপিবিএন সদস্য।

২৯ আগস্ট, ২০২০: পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীকে রিমান্ডে নেয় র‌্যাব।

৩০ আগস্ট ২০২০: আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি এস আই (বরখাস্ত) লিয়াকত আলী। মামলায় এদিন পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, এপিবিএনের তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্য পৃথকভাবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

৩১ আগস্ট, ২০২০: ওসি প্রদীপের আরও একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর। একইদিনে একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যার অভিযোগ এনে ওসি প্রদীপসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হয় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে। একইদিনে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির মেয়াদ ৭ দিন বাড়ানো হয়।

০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০: রিমান্ড শেষে ৩ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে সাক্ষীদের ফের তৃতীয়বারের মতো দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত র‌্যাবের আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিন চতুর্থ দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে ওসি প্রদীপকে পাঠানো হয়।

০২ সেপ্টেম্বর, ২০২০: ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। একইদিনে তার বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।  এদিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে ৩ সাক্ষীকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিন স্থানীয় আদালতে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ৮ নম্বর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০: পুলিশের চার সদস্য দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে।

০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি পুলিশের চার সদস্যকে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে জবানবন্দি দিতে আদালতে নেওয়া হয়।

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০: মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আরও এক আসামি গ্রেফতার। তার নাম রুবেল শর্মা ।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০: কনস্টেবল রুবেল ৭ দিনের রিমান্ডে।

০৪ অক্টোবর, ২০২০: সিনহা হত্যা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন আবেদন।

২০ অক্টোবর, ২০২০: সিনহা হত্যা মামলার চলমান বিচারিক কার্যক্রমকে বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে আসামি পক্ষের করা ফৌজদারি রিভিশন মামলার পূর্ণাঙ্গ  শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

২৮ অক্টোবর, ২০২০: আবারও রিমান্ডে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

১০ নভেম্বর, ২০২০: আসামি অসুস্থ হওয়ায় আসামি পক্ষের করা ফৌজদারি রিভিশন মামলার পূর্ণাঙ্গ  শুনানির নতুন তারিখ  ১৩ ডিসেম্বর নির্ধারণ হয়।

১৩ ডিসেম্বর, ২০২০: বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট। এর ম‌ধ্যে ১৪ জন জেল হাজ‌তে। আরেকজন পলাতক। একইদিনে মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিভিশন আদালতে খারিজ।

১৩ জুন, ২০২১: সিনহা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও এএসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত জামিন চাওয়ায় আবেদন শুনানি ২৭ জুন ধার্য করেন আদালত।

২৪ জুন, ২০২১: মামলার চার্জশিটভুক্ত ও পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আত্মসমর্পণ করেন। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

২৭ জুন, ২০২১: জামিন মেলেনি ওসি প্রদীপসহ ৬ আসামির।

২৩-২৫ আগস্ট, ২০২১: মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু। টানা তিন দিন এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এরপর সাক্ষ্য দেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। তিনি দাবি করেন,মেজর সিনহা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১: মামলার দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু।

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১: ওসি প্রদীপকে কারাবিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আদেশ।

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১: সিনহা হত্যায় সাক্ষীদের দেওয়া তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত।

২০-২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১: এ হত্যা মামলায় তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু।

২৮-২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১: সিনহা হত্যা মামলায় চতুর্থ দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু।

শুনানির সময় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে। (ফাইল ছবি)

 

১০-১২ অক্টোবর, ২০২১: সিনহা হত্যা মামলায় পঞ্চম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু। ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ।

২৫-২৭ অক্টোবর, ২০২১: সিনহা হত্যা মামলায় ৬ষ্ঠ দফার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু।  শেষ দিনে সাক্ষ্য দেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এ পর্যন্ত মোট ৫৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

১৫-১৭ নভেম্বর, ২০২১: এ হত্যা মামলায় সপ্তম দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ। এ ধাপে বুধবার (১৭ নভেম্বর) তৃতীয় দিনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

২৯ নভেম্বর-১ ডিসেম্বর, ২০২১: আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি খাইরুল ইসলামকে জেরা করেন।

০৬ ডিসেম্বর, ২০২১: ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ। একইদিন আদালতের কার্যক্রম শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। বিশেষ করে তার মক্কেল প্রদীপ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মাদককারবারিরা তাকে ফাঁসিয়েছেন।’

০৭ ডিসেম্বর,২০২১: যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য।

০৯-১২ জানুয়ারি, ২০২২: সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক সম্পন্ন।

১২ জানুয়ারি, ২০২২: সিনহা হত্যা মামলার রায় ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ।

৩১ জানুয়ারি, ২০২২: সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। মামলা থেকে এপিবিএনের এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো. রাজীব, মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশের কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও পুলিশের কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দেওয়া হয়। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় ১৫ আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।