logo
আপডেট : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:১৮
করোনা মোকাবিলায় নানামুখী চাপ
নিখিল মানখিন

করোনা মোকাবিলায় নানামুখী চাপ

গ্রাফিক্স- ভোরের আকাশ

করোনা মোকাবিলায় নানামুখী চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, দেড় মাসের ব্যবধানে করোনা আক্রান্তের হার বেড়েছে ২৮গুণ। দৈনিক মৃতের সংখ্যা ৩০ অতিক্রম করেছে। অথচ দেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। করোনা টেস্ট করাতে চান না সাধারণ মানুষ। উপসর্গহীন রোগী নিজেকে করোনামুক্ত ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শয্যাশায়ী না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে চান না করোনা রোগীরা।

সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করলে সরকারের একার পক্ষে এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক দৈনিক বুলেটিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দৈনিক পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা যতই বাড়ছে, নতুন রোগী শনাক্তের হারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গত ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে করোনা শনাক্তের জন্য দৈনিক পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ১৫৩টি, শনাক্তকৃত নতুন রোগী ২৯৭ জন এবং শনাক্ত ছিল ১.০৫ শতাংশ।

দেড় মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি দৈনিক পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা ৪৬ হাজার ২৪৮টি, শনাক্ত নতুন রোগী ১৫ হাজার ৪৪০ জন এবং দৈনিক শনাক্ত ৩৩.৩৭ শতাংশে পৌঁছে যায়। দৈনিক মোট শনাক্ত রোগীর বিপরীতে হাসপাতালমুখী হচ্ছে মাত্র ১৬ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শারীরিক জটিলতা না বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না করোনা রোগীরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন খান জানান, দৈনিক শনাক্ত মোট করোনা রোগীও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ২৮ জানুয়ারি যথাক্রমে ১৫ হাজার ৪৪০ ও ২ হাজার ৬২৪ জন; যা দৈনিক মোট আক্রান্তের বিপরীতে দৈনিক ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর ১৬.৯৯ শতাংশ। এভাবে দৈনিক মোট আক্রান্তের বিপরীতে দৈনিক ভর্তি হওয়া করোনা রোগী যথাক্রমে ২৭ জানুয়ারি ১৬.২৯ও২৬ জানুয়ারি ১৬.২৮ শতাংশ।

গত ১০ থেকে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে এহার ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে বলে জানান তিনি।

গত রোববার সকালে মহাখালীতে বিসিপিএস অডিটরিয়ামে কোভিড-১৯ এর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যে করোনা মোকাবিলায় নানামুখী চাপের বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শনাক্তের চেয়ে আরো বহুগুণ বেশি। পৃথিবীতে যেভাবে ওমিক্রন ছড়িয়ে গেছে, বাংলাদেশেও ছড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের হার প্রায় ২০ গুণ বেড়ে গেছে, এটা আশঙ্কাজনক। যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে, মৃত্যু হারও বাড়বে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হবে। কারণ সবাই পরীক্ষা করায় না।

১০ থেকে ১৫ হাজার লোক পরীক্ষা করছে, যার কারণে আমরা বুঝতে পারছি। আক্রান্তের সংখ্যা আমি মনে করি, আরো বহুগুণে বেশি। আমরা বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি, সে ঘোরার কারণে আমরা অন্যদেরও সংক্রমিত করছি। স্বাস্থ্যবিধি মানা, নিজেকে সুরক্ষিত করা, পরিবারকে সুরক্ষিত করা, দেশের সবাইকে সুরক্ষিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি, কক্সবাজারে যাচ্ছে, বাণিজ্য মেলায় যাচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তাহলে তো সংক্রমণের হার বাড়বেই! দপ্তরগুলো অর্ধেক লোকবল দিয়ে চালানোর কথা বলেছি অথচ বাইরে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি, মাস্ক পরছি না। আমরা টিকা দিচ্ছি, মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মোিডকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, গত এক মাস ধরে দেশের করোন পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। করোনায় মোকাবিলায় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে সরকার। কিন্তু সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করলে সরকার একার পক্ষে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

টেস্ট করাতে চান না সাধারণ মানুষ। উপসর্গহীন রোগী করোনামুক্ত ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শয্যাশায়ী না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে চান না করোনা রোগীরা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন না করলে সংক্রমিত নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়বেই। বেশি সংখ্যক মানুষ এখনো স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। করোনা টেস্ট করাতেও চান না। করোনা নিয়ে অবাধে ঘুরে বেড়ান।

এমন অবস্থা বিরাজ করলে সরকার কীভাবে করোনা মোকাবিলা করবে? সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে না এলে করোনা মোকাবিলায় সফলতা আসবে না বলে জানান তিনি।