logo
আপডেট : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:০৮
‘ধর্ষণের পর কাকলীকে হত্যা’
ধামাচাপা দিতে তুরাগ থানায় রাতভর চলে নাটকীয়তা
ইদ্রিস আলম

‘ধর্ষণের পর কাকলীকে হত্যা’

প্রতীকী ছবি

প্রেমের টানে মৃত্যুর দুই মাস আগে আবুল হাসেমের বাসায় চলে যান কাকলী। প্রেমিকের অর্ধেক বয়সেরও কম বয়সি কাকলী। মনে ধরলে বয়সের কী আসে যায়। প্রেম বলে কথা! অনেকটা এমনই ছিল হাসেম-কাকলীর প্রেম।

কিন্তু হায়! বিধাতার কী নির্মম পরিহাস। বেশিদিন টিকল না প্রেম। দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায় প্রেমিকা কাকলী। 

তবে রাজধানীর তুরাগে তরুণী কাকলীর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। পরিবার বলছে, তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর আসামিপক্ষ ও পুলিশ বলছে, আত্মহত্যা করেছেন কাকলী। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার শুরু থেকেই থানা-পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ২৬ জানুয়ারি তুরাগের বামনারটেকের একটি বাসার ছয়তলায় আবুল হাসেমের ফ্লাট থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস কাকলীর (২৪) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, মেয়েকে বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন আবুল হাসেম।

নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে তিন সন্তানের জনক আবুল হাসেমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে কাকলীর। দিন যত বাড়তে থাকে সম্পর্কের গভীরতাও বাড়ে। মৃত্যুর দুই মাস আগে আবুল হাসেমের বাসায় চলে যান কাকলী।

ওই বাসা থেকেই কাকলীর ঝুলন্ত মরহেদ উদ্ধার করা হয়। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানতেন আবুল হাসেমের প্রথম স্ত্রী তাসলিমা আক্তারও।

এদিকে ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কাকলীর পরিবার। শুধু তাই নয়, মামলা লেখা নিয়েও তুরাগ থানায় ওইদিন রাতভর চলে নাটকীয়তা।

নিহতের পরিবার বলছে, তুরাগ থানার উপপরিদর্শক গোবিন্দ নিজের মতো করে এজাহার লিখে স্বাক্ষর করতে চাপ দেন মামলার বাদী কাকলীর ছোটভাই বেলালকে। যার একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

তবে ওই এজাহারে স্বাক্ষর করেনি নিহতের পরিবার। যদিও পরে আবার এজাহারের লেখা পরিবর্তন করে মামলা নেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই গোবিন্দ।

একটি মামলায় দুটি এজাহার লেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই গোবিন্দ বিরক্তবোধ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।

এ নিয়ে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিবেদক থানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় থানায় প্রবেশ করেন ওসি।

অবশ্য নানা নাটকীয়তার পর প্রধান আসামি আবুল হাসেমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে আদরের মেয়ে কাকলীকে হারিয়ে দিশেহারা মা জোসনা বেগম। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। মেয়ের হত্যার বিচার চান তিনি।

মামলার বাদী কাকলীর ছোটভাই বেলাল হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আবুল হাসেমের প্রথম সংসারে স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকার পরও হাসেমের স্ত্রী নিজের সংসারে কেনই বা সতিন আনবেন?’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন রাত ১২টার পর আমার জন্মদিনে মেসেঞ্জারে আমাকে উইশ করে আপু। রাতের মধ্যে কী এমন হলো যে আপু আত্মহত্যা করবেন? ওরা নানাভাবে আপুকে অত্যাচার করত।

‘ওদের ভয়ে কথা বলতে পারত না। ওখানে যাওয়ার পর থেকে আপুর ফোন কেড়ে নেয় ওরা। মাঝেমধ্যে ফোন পেলেও কথা বলতে পারতনা, পাশে হাসেমের বৌ বাচ্চা আছে। আপুকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত ওরা।’

হাসেমের সংসার থাকার পরও কীভাবে কাকলী ওই সংসারে গেল জানতে চাইলে বেলাল বলেন, ‘হাসেমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী একদিন আমার মাকে ফোন করে বলেন কাকলী আমাদের বাসায়। আমি ওদের বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আপু মারা যাবার পর কোনো বিয়ের কাবিননামা দেখাতে পারেনি তারা।’

রাজধানীর পশ্চিম বামনারটেক এলাকায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস কাকলী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে কাকলীই বড়।

প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের দাবি, এ হত্যার সঠিক বিচার যেন হয়। তবে ঘটনার দিন তুরাগ থানা-পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ তারা।