logo
আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:১০
ডিআইজি মিজানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন
আদালত প্রতিবেদক, ঢাকা

ডিআইজি মিজানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন

মিজানুর রহমানের ও খন্দকার এনামুল বাছির। ফাইল ছবি

ঘুষ গ্রহণের মামলায় পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।

তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি।’

শুনানিতে এ আইনজীবী বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন, ফোন রেকর্ড ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত যে, ডিআইজি মিজান বাধ্য হয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। তাই চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়াটা অপরাধের মধ্যে পড়ে না।

‘তা ছাড়া এই ৪০ লাখ টাকার বৈধতা সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তাই তিনি এই অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার যোগ্য। আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে ন্যায়বিচারের প্রার্থনা করছি।’

এরপর খান্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে অপর জেষ্ঠ্য আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন মর্মে সময় আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য তারিখ ধার্য করেন।

গত ২৪ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।

শুনানিকালে ডিআইজি মিজান এবং এনামুল বাছিরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলার অভিযোগপত্রে ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত।

এরপর গত ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন মিজানুর রহমান এবং এনামুল বাছির। ওইদিন তারা লিখিত বক্তব্য জমা দিবেন বলে আদালতকে জানান। এজন্য তারা সময়ও চান।

আদালত ১২ জানুয়ারি আসামিদের লিখিত বক্তব্য জমা দেয়ার তারিখ ধার্য করেন। ওইদিন ডিআইজি মিজান ৬ পৃষ্ঠার এবং এনামুল বাছির ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন শেখ মো. ফানাফিল্লাহ।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর আদালতের জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। গত বছর ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক ।

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান।

ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।

এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।

এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। এই মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয় দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে।