logo
আপডেট : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:০৫
গভীর পর্যবেক্ষণে ঢাকা
ইউক্রেন ইস্যু সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশও
তরিকুল ইসলাম

ইউক্রেন ইস্যু সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশও

ইউক্রেন ইস্যু সমাধান না হলে এবং নতুন করে দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ হলে এর প্রভাব পড়বে ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও আমদানি ও রপ্তানিতে দেখা দিত পারে নতুন জটিলতা। রাশিয়া যদি ইউরোপে জ্বালানি পাইপলাইন বন্ধ করে দেয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকাতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে।

তখন নতুন বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে চড়া দামে তেল কিনতে হবে বাংলাদেশকে। ফলে ইউক্রেন ইস্যুর সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চলমান ইউক্রেন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় ঢাকা। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে এই অঞ্চলের সংকট শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন একটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হতে পারে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সংলাপে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।

তাই সংলাপ ও সহযোগিতার চেতনাকে সমুন্নত রেখে এই সংকট নিরসনে সব পক্ষকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।


পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কোনো ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও সংঘাতের সৃষ্টি হয় এমন কিছুকে সমর্থন করে না বাংলাদেশ। ইউক্রেন ইস্যুতে আমরা কারো পক্ষে-বিপক্ষে যেতে পারি না।

কারণ সব দেশই আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। নীতিগতভাবেই এটি আমাদের অবস্থান। আশা করি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই পক্ষ আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ একটি সমাধানে পৌঁছাবে।’


এই সংঘাত আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইউক্রেনে সংঘাত হলে এর প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাশিয়া জ্বালানি পাইপলাইন বন্ধ করে দিলে সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিকল্প জ্বালানির উৎস বের করতে হবে।

ইউরোপ যদি মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সংগ্রহ করে এতে জ্বালানি সরবরাহের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে।’


নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না ইউক্রেন ইস্যু পূর্ণ যুদ্ধে রূপ নেবে। হুমকি-ধমকি ও নিজস্ব নিরাপত্তা শঙ্কায় যে যার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এটি যে কেউ তার নিজের জন্য করতে পারে।

সমস্যা হলো- আতঙ্ক যখন ছাপিয়ে যায়, তখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। যদি এমন কিছু ঘটে তার প্রভাব তো বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘এখন ক্রমশ পৃথিবী পশ্চিমাকেন্দ্রিক শক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে।

কিছু কিছু দেশ তার বলয় তৈরি করতে চাইছে। তারা তাদের গুরুত্বটা জানান দিচ্ছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়ায় ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে দেশটি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন সমস্যা ও শুল্ক জটিলতা না থাকলে উভয় দেশের বাণিজ্য আরো বাড়ত বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

দৈনিক ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, ‘দেশটিতে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। কিছু জটিলতার কারণে অন্য দেশের মাধ্যমে রাশিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে হচ্ছে। এগুলো সমাধানেরও চেষ্টা চলছে।’


মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি ব্যাংকিং সুবিধা বন্ধ আছে।

কারণ, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে থাকায় এখানে লেনদেনের ঝুঁকি আছে। বর্তমানে রাশিয়ায় ব্যবসা করা গ্লোবাল ব্রান্ডগুলো হংকং ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের আমদানি মূল্য পরিশোধ করছে।