বোরো আবাদে হাওর এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। কাওয়াদিঘি হাওরের মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ একর জমিতে আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হাওরাঞ্চলে বোরো চাষ সচল রাখতে দ্রুত সংকট সমাধানের জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগি কৃষকরা।
মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের রাজনগর উপজেলার অন্তত সাতটি গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক এবং সদর উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক পড়েছেন বিপাকে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভুক্তভোগিরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক তদারকির অভাবে তৈরি হয়েছে পানির সংকট।
জানা গেছে, কাউয়াদিঘি হাওরে অনাবাদি কৃষিজমি চাষাবাদের আওতায় আনতে ১৯৮২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড মনু নদে স্লুইস গেট বসিয়ে সেচ প্রকল্প স্থাপন করে। প্রকল্পের আওতায় সদর ও রাজনগর উপজেলায় ১০৫ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল বোরো আবাদে পানি সরবরাহ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান।
জেলার রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের গ্রাম সুনাটিকি-মেদিনীমহল-গোবিন্দপুর এলাকার মাঠে এখন বোরো চাষের সবুজ গালিচা থাকার কথা। কিন্তু এই মাঠ এখন গবাদিপশুর বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। বোরো আবাদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় প্রায় ৭০০ একর জমি পতিত থাকার শঙ্কায় কৃষক।
সুনাটিকি এলাকার কৃষক ফয়েজ আলি ও গোবিন্দপুরের কৃষক রহমত মিয়া জানান, চারা রোপণের সময় পার হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে হালি চারা। এজন্য বোরো ফসল উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল তিন শতাধিক চাষি বিপাকে পড়েছেন।
এছাড়া সদর উপজেলা সংলগ্ন কাউয়াদিঘির হাওরাঞ্চলে সেচ সুবিধা না থাকায় প্রায় এক হাজার একর জমি অনাবাদি থাকছে। প্রায় দুই শতাধিক চাষি পড়েছেন বিপাকে।
সদরের আখাইলকুড়া ইউনিয়নের গোয়ালিকা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর হাওরের উপরিভাগের অংশজুড়ে খড়কুটো পড়ে আছে। ‘লাছগাঙ’ নামের খালটি এ এলাকা ঘেঁষে কাউয়াদিঘি হাওরে পড়েছে। দেখা যায়, এই খাল থেকে বেশ কজন কৃষক সেচ পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছেন।
খইশাউড়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ও রসুলপুরের অনল ঘোষ জানান, সেচ পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দেওয়ায় খরচ বেশি হচ্ছে। গোয়ালিকা এলাকাতে একটি স্লুইস গেট করা হলে হাওরের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারতেন। এক দশক ধরে তারা এ দাবি জানিয়ে এলেও কর্তৃপক্ষ তা নজরে নিচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানিয়েছেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এলাকার মানুষ বারবার দাবি জানাচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে সমস্যা সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পুরো প্রকল্প এলাকাকে একটা জরিপ করে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা রাখি, এটা এক বছরের মধ্যে পাশ হয়ে আসবে, তখন সমাধান করা যাবে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, এই অনাবাদি জমিগুলো কীভাবে আবাদের আওতায় আনা যায় সে ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসির সমন্বয়ে যৌথ সভা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে আগামী মৌসুমে সংকট নিরসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে ২৭ হাজার ৮০০ হেক্টর। উপরি অংশে ২৯ হাজার হেক্টর। এ বছর চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৩ টন চাল। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের ৫৪০ টন। হাইব্রিড ৪০ হাজার ১৬ টনসহ মোট চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ২৯ হাজার ৪০০ টন।