সিলেটে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ। প্রত্যেক ঘরেই দেখা মিলছে এমন রোগীর। তবে এটি ‘মরণঘাতি’ করোনার উপসর্গ হলেও উদাসীনতা রয়েছে আক্রান্তদের। নমুনা পরীক্ষা নিয়েও নেই আগ্রহ। অনেকেই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও।
চিকিৎসকেরা বলছেন, সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে যেসব করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তার অধিকাশংই গ্রামীণ এলাকার। আর সিলেটে করোনা পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। অবশ্য সকল জ্বর-সর্দি মানেই করোনা নয়। তবে পরিস্থিতির কারণে উপসর্গ থাকলে নিজে থেকে ওষুধ সেবন না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সিটি এলাকার বাইরের উপজেলাগুলোতে জ্বর-সর্দির প্রকোপ বেশি। গ্রামাঞ্চলের ওষুধের দোকানে এ রোগের সাধারণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে আক্রান্তরা নিজ থেকে প্যারাসিটামল, নাপা, হিস্টাসিনসহ এ ধরনের ওষুধ নিয়ে সেবন করছেন। কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। কেউ কেউ বেশিদিন অসুস্থ থাকলে হাসপাতালে ছুটছেন।
শহরতলীর শাহপরান এলাকার বাসিন্দা ফার্মেসি ব্যবসায়ী জুয়েল আল হাদি জানান, কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দির সাধারণ ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। আক্রান্তরা নিজে এসে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে স্বজনদের দিয়ে ওষুধ কিনে নেন। তবে সবারই হাসপাতালে যাওয়াতে অনাগ্রহ রয়েছে।
সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার সড়কেরবাজারের বাসিন্দা সমাজকর্মী এরশাদ আহমদ চৌধুরী জানান, কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গ্রামীণ এলাকা হওয়ার কারণে আক্রান্তরা হাসপাতালে না গিয়ে নিজেরা সাধারণ ওষুধ নিয়ে যান। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা সদরের ওষুধ ব্যবসায়ী জালালউদ্দিন বলেন, কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি নিয়ে রোগীরা বেশি আসছেন। কিন্তু তারা হাসপাতালে যেতে চান না। তারা সাধারণ ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি এ ধরনের রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আবু ইসহাক আজাদ জানান, বেশিরভাগ মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে। গত দুই সপ্তাহে হাসপাতাল ও তার চেম্বারে প্রায় ১০০ রোগী দেখেছেন, যারা সবাই এই ফ্লুতে আক্রান্ত। হাসপাতাল আউটডোরে যেসব রোগী আসছে এর সিংহভাগই জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী। অনেকে আসছেন শরীর দুর্বল নিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে শিশু ও বয়স্কদের জন্যে একটু ঝুঁকি থাকে।
ঋতুজনিত কারণে এ মৌসুমে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য বছর জ্বর-সর্দি ৪-৫ দিনে সেরে গেলেও এবার তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এবারের জ্বরের ধরনও অনেকটা অচেনা। এ জ্বরের কারণে অসুস্থ ব্যক্তির শীত শীত ভাব, মাথা ব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, ডায়রিয়া, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে।
সিলেট রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আরমান আহমেদ শিপলু বলেন, বর্ষা মৌসুমে মানুষের জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। করোনার উপসর্গও এটি। অনেকে করোনায় আক্রান্ত হলেও জ্বর-সর্দি মনে করে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না; কিন্তু যখন সাধারণ ওষুধে রোগ সারছে না, তখনই তারা হাসপাতালে যাচ্ছেন। এতে করে তার পরিবারসহ প্রতিবেশীদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লেও সিলেটে এখনো ধরনটি শনাক্ত হয়নি। তবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।