logo
আপডেট : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:৫৬
চালের দাম আবার বেড়েছে কেজিতে ১-৭ টাকা
নাজমুল হাসান রাজ

চালের দাম আবার বেড়েছে কেজিতে ১-৭ টাকা

চাল বাজার

পরপর দুবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে দেশে। এরপরও বছরের কোনো সময়েই স্থিতিশীল থাকছে না চালের বাজার। কখনো মাস না ঘুরতেই, কখনো সপ্তাহ শেষ না হতেই বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম। এ ধারাবাহিকতা দেখা গেছে এ সপ্তাহেও। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে চালের দাম কেজিতে ১ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বস্তা প্রতি এই দামবৃদ্ধি ৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে পাইকার, আড়তদার আর মিলমালিকরা জানাচ্ছেন পরস্পরবিরোধী তথ্য। বিশেষ করে পাইকার ও আড়তদাররা দাম বাড়ার জন্য দায়ী করছেন মিল মালিকদের।

তবে এই ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই স্বীকার করেছেন, চাষি থেকে ভোক্তাদের হাতে চাল পৌঁছাতে কয়েক দফা হাতবদলের কারণেই দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। হাত বদলের প্রতি স্তরেই ব্যবসায়ীরা মুনাফা করায় নিয়মিত মাশুল গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এই প্রক্রিয়াটাও ঘটে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ফলে কখনোই সহনীয় থাকছে না চালের দাম। সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নানা আশ্বাস দিলেও কখনোই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এমন অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের। বছরের পর বছর ধরেই চলে শুধু চাপান-উতোড়ের খেলা। সব মিলিয়ে চাল নিয়ে ব্যবসায়ীদের চলমান চালবাজিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পাইকারি বাজার ঘুরে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চালের দাম বাড়ার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর। কেউ কেউ জানান, গত এক মাস ধরে পঞ্চাশ পয়সা থেকে শুরু করে ৫ টাকা হারে উঠানামা করছে চালের বাজার। সরকারের বাজার মনিটরিং থাকলেও বাজারমূল্য স্থির থাকছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে সরু ও মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। বিক্রেতারা দাবি করেছেন, মিল পর্যায় থেকে চালের দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ও বাদামতলী ঘুরে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। বাবু বাজারের মেসার্স তাসলিমা রাইস এর স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহিমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বাজারদর কমেনি। আজ (গতকাল) মিনিকেট ব্রি-২৮ ৪৮ টাকা কেজি, যা ২ হাজার ৪০০ টাকা বস্তামূল্যে বিক্রি করছেন তিনি। আমেনা বাসমতির কেজি ৬০ টাকা, যা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনান্য চালের বাজারের তুলনায় বাবুবাজারের দাম ধরে রাখার চেষ্টা করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

যাত্রাবাড়ি, রাজধানীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার মানভেদে প্রতিকেজি নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা, মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, বাসমতি ৬৬ টাকা, মোটা-২৮ চাল ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা, পাইজাম চাল ৪২ থেকে ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে ছিল নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, বাসমতি ৬৪ টাকা, মোটা ২৮ চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

পুরান ঢাকার বাদামতলি অন্যতম বৃহৎ চালের বাজার। এখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চাল সরবরাহ করা হয়। বাদামতলী ‘ঢাকা ট্রেডিং এজেন্সি’ ও ‘সিরাজ রাইস এজেন্সি’র ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি চালের বস্তায় অন্তত ২০ -৫০ টাকা বেড়েছে। তাতে কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা হারে বেড়েছে।

হাজি দিল মোহাম্মদ এজেন্সির ম্যানেজার আক্তার মাহমুদের কাছে চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি দায় চাপান মিল মালিক সিন্ডিকেটের ওপর। তিনি বলেন, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে অনেক সময় চালের দাম বাড়ায়। এ কারণে এবারও চালের দাম বেড়েছে। তবে দেশে ধানের বাম্পার ফলন হলেও তার ধারণা, চালের দাম বাড়ার এই প্রবণতা বৈশাখ পর্যন্ত থাকতে পারে।

বাবু বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স শিল্পি রাইস এজেন্সির মালিক বলেন, পুরাতন চালের দাম বেশি। মিনিকেট, আটাশ ও উনত্রিশ জাতের চালের দাম বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবু বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, কিছু কিছু অসৎ কল মালিক অতিরিক্ত চাল গুদামজাতের মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করেছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। গত সপ্তাহ থেকে দাম স্থিতিশীল, তবে অনান্য চালের তুলনায় মিনিকেট চালের দাম ৫০ পয়সা বেড়েছে কেজি প্রতি।

বাদামতলীর ব্যবসায়ী মোমরেজ বলেন, আগের চেয়ে দাম বেড়েছে। এটি আড়তদার নাকি মিল মালিকরা করেছেন সেটি আমরা জানি না।

ব্যবসায়ী আক্তার মাহমুদ বলেন, নতুন ধানের চাল কম আছে, বেড়েছে পুরাতন চালের দাম। একটি চালের বস্তায় ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ হয়। নতুন চালের দাম কম, বাজার যাচাই করতে পারেন।

চাল ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল আমদানি করে পাইকারি আকারে বিক্রি করি। নতুন চাল বাজারে আসার পরেও পুরান চাল বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রতি কেজি চালে বেড়েছে প্রায় ২-৪ টাকা। মিনিকেট চালের চাহিদা বেশি থাকায় এটির দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা।

ঢাকা রাইস এজেন্সির ম্যানেজার বাবু বলেন, সরকার বাইরে থেকে চাল আমদানি শুরু করলে দাম আবার কমতে পারে। নতুন চালের তুলনায় পুরান চালের মূল্য কিছুটা বেশি। তবে নতুন চালের মূল্য গত বছরের চেয়ে আরেকটু বেশি। এজন্য তিনি মিল মালিকদের দায়ী করে বলেন, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়িয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিল গেটে চালের দাম কেজি প্রতি ১-২ টাকা বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা।

চালের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছেন ২ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি করছেন ৩ হাজার ২৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন হাজার থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা দরে। মোটা চাল বিক্রি করছেন বস্তা প্রতি ২ হাজার ১৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল দুই হাজার টাকা।

দাম বাড়ার বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন মিল মালিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা ফোন ধরেননি।