logo
আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:২৭
শিশুর ইন্টারনেট আসক্তি
ইসমত জেরিন স্মিতা

শিশুর ইন্টারনেট আসক্তি

ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। যে কোনো কিছুর উত্তর জানতে বা অবসর কাটাতে অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডায় ভার্চুয়াল জগতের বিকল্প নেই। আমরা প্রায় অবসর যাপনের অনেকটা সময়ই ব্যয় করি ইন্টারনেটে।

তা হোক ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনে। বড়দের প্রযুক্তির ব্যবহার শিশুদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত করেছে। শিশুর ইন্টারনেট আসক্তি কমানোর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমরা বড়রাই যদি সারাক্ষণ মোবাইলে থাকি, তা হলে সন্তানেরও মনে হবে এটাই স্বাভাবিক।

তাই সন্তানের নেশা কাটানোর জন্য নিজেও যতটা সম্ভব মোবাইলের ব্যবহার কমান। অফিসের পরে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। আপনি যদি বাচ্চাকে পড়তে দিয়ে নিজে মোবাইলে ব্যস্ত থাকেন আর আশা করেন, সন্তান মন দিয়ে পড়বে- সেটা সম্ভব নয়।

এতে বাচ্চা যদি পড়া ছেড়ে উঠে যায় কিংবা মোবাইলে গেম খেলতে বায়না ধরে- তা হলে ওকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। সন্তান যখন পড়ছে তখন আপনি মোবাইলে ব্যস্ত না থেকে বই বা ম্যাগাজিন পড়ান বা অন্য কোনো কাজ করুন। আপনাকে দেখেই সন্তান শিখবে। তাই ওর রোল মডেল হয়ে ওঠা জরুরি।


অনেক বাড়িতেই ছোট বাচ্চাকে ভোলাতে, কান্না থামাতে কিংবা খাওয়ানোর সময় বাবা-মায়েরাই শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন। বাচ্চাও তৎক্ষণাৎ সব ভুলে যায়। পন্থাটা সহজ ঠিকই, কিন্তু সমস্যার বীজ রোপণ হয় এখান থেকেই। এরপর বাচ্চা যতই বড় হয়, ওর জেদও বাড়তে থাকে সমানতালে।

সত্যি কথা বলতে কি, বর্তমান যুগে এর সমাধান বের করা বেশ কষ্টকর। তবু বলব চেষ্টা করুন, যতটা সম্ভব শিশুকে মোবাইলের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে। বাচ্চাকে ভোলানোর জন্য কোলে নিয়ে একটু ঘুরে আসুন, ক্যারিকেচার করে ওকে ভোলানোর চেষ্টা করুন কিংবা কোনো খেলনা দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করুন। সন্তান একটু বড় হওয়ার পর ওকে বোঝান মোবাইল কাজের জিনিস, খেলার বস্তু নয়।


সন্তান কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে কিংবা মোবাইলে গেম খেলবে তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন। ওর সঙ্গে চুক্তি করুন দিনে আধাঘণ্টা গেম খেলতে পারে কিংবা পড়াশোনার পর কিছুক্ষণ ইন্টারনেট সার্ফ করতে পারে। বর্তমান যুগের পরিস্থিতিতে যেখানে বড়দের সবার হাতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য, সেখানে সন্তানকে গ্যাজেট থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়। তা ছাড়া তা উচিতও নয়।

তবে সন্তান মোবাইলে কী ধরনের গেম খেলছে, ইন্টারনেটে কী সার্চ করছে বা কী ধরনের ভিডিও দেখছে তা খেয়াল রাখুন। সন্তান একটু বড় হলে ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে ওকে সতর্ক করে দিন। নিজের ফোনে সব সময় পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন, যাতে সন্তান যখন-তখন মোবাইল খুলে ফেলতে না পারে।


ইন্টারনেটের সবটাই কিন্তু খারাপ নয়। বরং ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটাই ছোটদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বিরাট মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। ফোনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপ ডাউনলোড করুন। ল্যাপটপে মাইক্রোসফট অফিসের ছোটোখাটো কাজ শেখান।

এ ছাড়া ভিডিও শেয়ারিং সাইটে নানা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখাতে পারেন। ইতিহাস বা ভূগোল পড়ার সময় ল্যাপটপে ম্যাপ এবং উপযোগী ছবি দেখান। যেমন এভারেস্ট নিয়ে পড়ার সময় বাচ্চাকে এভারেস্টের ছবি দেখাতে পারেন। কিংবা এভারেস্টে অভিযাত্রীরা কীভাবে অভিযান করেন তার ভিডিও দেখাতে পারেন। এতে পড়াশোনা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে এবং বাচ্চারও ভালো লাগবে।

দিনের কোনো একটা সময় বাচ্চার সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান। সন্তানকে কাছে টেনে নিয়ে একসঙ্গে সারাদিনের গল্প করুন। এই স্পর্শ, আদরগুলো খুব জরুরি। রাতে ঘুমানোর আগে একটু মজা করার জন্য পিলো ফাইট করতে পারেন কিংবা গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারেন। এই সময়টুকুতে আপনারাও মোবাইল থেকে দূরে থাকুন। এতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সুন্দর বন্ডিং গড়ে উঠবে।