logo
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:০৯
পড়ে আছে ১৬২৮ কোটি টাকার স্বর্ণ
নিলাম হয় না এক যুগের বেশ
জাফর আহমদ

পড়ে আছে ১৬২৮ কোটি টাকার স্বর্ণ

প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক আটক করা অমীমাংসিত স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৯০১ কেজি। মামলা জটিলতার কারণে এসব স্বর্ণ নিলামে তোলা যাচ্ছে না। পড়ে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। ফলে সরকার ১ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাাংলাদেশ ব্যাংকে জমা মোট স্বর্ণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬০ কেজি ১০২ গ্রাম। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৫৯ দশমিক ২২৫ কেজি স্থায়ী। আর ২ হাজার ৯০১ কেজি অস্থায়ী।

স্থায়ী স্বর্ণের মধ্যে ২ হাজার ২৯৯ দশমিক ৮৩০ কেজি রিজার্ভ হিসাবে বিভিন্ন রিজার্ভ ব্যাংক ও আইএমএফে জমা আছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে ১৫৯ দশমিক ৩৯৫ কেজি। অস্থায়ী ২ হাজার ৯০১ কেজি স্বর্ণের বর্তমান বাজার দর (প্রতি আউন্স ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা হিসাবে) ১ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।

মামলা জটিলতা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে নিলামে তোলা যাচ্ছে না। ফলে এই এই বিপুল পরিমাণ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক আটক স্বর্ণ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা করে থাকে। যতদিন ওই স্বর্ণের মামলা নিষ্পত্তি না হয় ততদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্থায়ী স্বর্ণ হিসাবে তা জমা থাকে। মামলা নিষ্পত্তি হলে ওই স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া অর্থ সরকারের ঘরে রাজস্ব হিসাবে জমা হয়।

আটক স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয় বা নিলামে বিক্রির মাধ্যমে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যায়। গত এক যুগ ধরে মামলা জটিলতা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্বর্ণ নিলাম না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ পড়ে আছে।

দেশে সারা বছরে স্বর্ণের চাহিদা ২১ টন। স্বর্ণের এই চাহিদা মেটানোর জন্য বৈধপথে আমদানি করা হয় না। গত কয়েক বছর ধরে স্বর্ণ আমদানির জন্য অনুমতি দিলেও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে সাড়া মিলছে না।

এই স্বর্ণের অধিকাংশ আসে চোরাপথে। এর বাইরে দেশের অভ্যন্তরে পুরাতন অলংকার ভেঙে নতুন করে গড়া হয় এবং বিদেশ ফেরত মানুষের সঙ্গে করে নিয়ে আসা স্বর্ণ দিয়ে চাহিদা মেটানো হয়। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকা স্বর্ণ নিলামে না ওঠার কারণে চোরাই পথে আসা স্বর্ণই প্রধানতম ভরসায় পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, আটক করা এসব স্বর্ণ বিমানবন্দর, সীমান্ত পথ বা অন্য কোথাও আটক করার পর, সে স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। তারপর স্বর্ণের মালিক স্বর্ণ ফিরে পেতে মামলা করার সম্ভাবনা থাকে। ততদিন ওই স্বর্ণ সরকারের পক্ষে সংরক্ষণকারী হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হয়।

তবে ওই স্বর্ণ আটককারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে সংরক্ষণ করে। বিপুল পরিমাণ এই স্বর্ণ এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে, নিলাম হচ্ছে না। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে স্বর্ণের হিসাব বহন করতে হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় ধরে কেন নিলামে তোলা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ভোরের আকাশকে বলেন, মামলা জটিলতাই প্রধান কারণ। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলার এক পর্যায়ে নিষ্পত্তি হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আটক স্বর্ণ নিলামে না তোলার জন্য মামলা একটি কারণ হলেও মূল কারণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। নিলামে তুললেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার দরের চেয়ে

অনেক কম দামে নিলামে অংশ নিয়ে স্বর্ণ হাতিয়ে নেন। এতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে নিলামে না তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পড়ে আছে।