logo
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:১৩
বৈঠকে বসেছে সার্চ কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈঠকে বসেছে সার্চ কমিটি

সার্চ কমিটির সদস্যরা (উপর থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে)- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি কুদ্দুস জামান, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মুসলিম চৌধুরী, পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি বৈঠকে বসেছে।

সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ভোরের আকাশকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, রোববার বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে শুরু হয় সার্চ কমিটির এই প্রথম বৈঠক। কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন।

গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের এই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।

সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, আইনে নির্ধারিত দুজন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জানা গেছে, প্রথম বৈঠকে সার্চ কমিটির কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। সার্চ কমিটির কাজ হবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তির বাছাই করে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা।

প্রতি পদের বিপরীতে দুজনের নাম সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি। সেই নাম থেকে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর সেই ইসির পরিচালনায় হবে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান ইসির মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শনিবার ভোরের আকাশকে বলেন, আমার ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আইন ও সংবিধান অনুসারে পালন করার চেষ্টা করব। কখন প্রথম বৈঠকে বসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে কথা বলে বৈঠকের দিন ও সময় ঠিক করা হবে।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। আইন না থাকায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময় থেকে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন শুরু হয়, যা অনুসরণ করেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

এবার সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্যেই গত মাসে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি, যা গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয়।

ইসি গঠনে নতুন পাস হওয়া আইনে সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। আইন পাওয়া হওয়ার পর গত ২৯ জানুয়ারি ইসি নিয়োগের বিলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সই করেন। ৩০ জানুয়ারি রোববার তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

সংসদ সচিবালয়ের প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়: সেহেতু এত দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হলো।

আইনের ১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হবে এবং যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ধারা ২-তে বিভিন্ন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সার্চ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি

আইনের ৪ ধারায় কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।

সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা

আইনের ৫ ধারায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা

আইনের ৬ ধারা অযোগ্যতা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি তিনি কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন।

এছাড়া যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস আইনের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন, বা আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, তবেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিইসি বা নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য হবে।

আইনের ৭ ধারায় অনুসন্ধান কমিটি সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। ৮ ধারা সরকারকে আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আর ৯ ধারায় আগের দুই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।