স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে খাদিজা বেগমের সংসার। তবে ২০১৪ সালে স্বামীকে হারান তিনি। এরপর দুই ছেলেকে নিয়ে জীবনযাপন শুরু করেন। বড় ছেলে চাকরি ও ছোট ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এলাকার বাইরে থাকেন। ছুটিতে তারা বাড়িতে এলে মায়ের জন্য শখ করে কফি ও ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে আসতেন। সেই থেকেই ড্রাগন ও কফি চাষ শুরু করেন খাদিজা বেগম। এ নিয়ে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে এ দুটি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। পরিচিত ফসল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নতুন নতুন ফলের চাষ করে গোটা এলাকায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন খাদিজা।
নীলফামারীর জলঢাকার বৃহত্তর কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুনে ১৬ শতক জমির ওপর খাদিজা বেগম ড্রাগন ও কফি চাষ শুরু করেন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে গাছের সংখ্যা। বর্তমানে তার বাগানে ২৬০টি ড্রাগন ও ২ হাজার ৮০টি কফি গাছ আছে। ১৬ শতক জমির ওপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফল এবং ২৪ শতকে রয়েছে কফির খামার। করোনার মধ্যে তিনি কয়েকবার ড্রাগন ফল বিক্রিও করেছেন।
দৈনিক ভোরের আকাশের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় খাদিজা বেগমের। তিনি বলেন, ‘আগে এই জমি খালি পরে থাকত। পরে যখন এই জমিকে বাগানের রূপ দিতে থাকি তখন থেকে শুরু হয় বাগান করার উদ্যোগ। কফিগাছে এবারই প্রথম কফি ধরেছে। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের দুই ধরনের কফিগাছ আছে আমার বাগানে। আমার একাকীত্ব সময় এ বাগানের মধ্যে দিয়েই কাটে। অনেক সযত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে এ বাগান গড়ে তুলছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাগানের সূচনা মাত্র ২৬০টি চারা দিয়ে। ইতোমধ্যে গাছের বয়স প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। ড্রাগন গাছে ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এ ছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল পাওয়া যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৩০- ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব।’
ফল বিক্রি নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম ২০ কেজি ফল বিক্রি করছি। প্রতি কেজি ৪শ টাকা করে বিক্রি করেছি। ড্রাগনের চারাও বিক্রি করেছি। প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।’
খাদিজা বেগমের ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় সযত্নে ক্যাকটাস লাগিয়েছেন কেউ। একটু কাছে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা খামার। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফল, ফুল, মুকুল, পাকা ড্রাগন ও কফি।
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মীর তামিম বান্নার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,‘খাদিজা বেগমের বাগানটি আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। খাদিজা বেগম ২০১৮ সালে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ও কফি চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেন এবং বাগান শুরু করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। পরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগানের কার্যক্রম শুরু করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হন। নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এ সাফল্য থেকে পুনরায় বাগানকে আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য এক টুকরো জমি ফাঁকা না রাখা। তাই আমরা বসতবাড়ির আশপাশে সবাই যদি স্বল্প পরিসরে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি, তা হলে দেশে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের দেশের কৃষি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে বলে আমি আশা করছি।’