logo
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:৩৬
স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই শাহজালাল বিমানবন্দরে
ইদ্রিস আলম হৃদয়

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই শাহজালাল বিমানবন্দরে

বিমানবন্দরে আগতদের মাস্ক ছাড়া অবাধে ঘোরাঘুরি। ছবি ভোরের আকাশ

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। প্রবেশেও নেই বিধিনিষেধ। মাস্ক ছাড়াই চলছে অধিকাংশ মানুষ। একজন যাত্রীকে নিতে বিমানবন্দরে আসছেন ৮ থেকে ১০ জন। এতেই দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের জটলা। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্বজনরা জানেন না কে করোনা, আর কে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী। তবে আগের মতো ট্রলি নিয়ে সংকট নেই। এ নিয়ে অভিযোগ নেই যাত্রীদের। এদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিমানবন্দরে আসতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে সবাইকে। কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিমানবন্দরে ঢুকছেন মানুষ।


গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা মানুষের ঢল। অন্যদিকে কোনো যাত্রী বা স্বজনকে দেখা যায়নি মাথায় করে ব্যাগেজ বয়ে নিতে। আরব আমিরাতফেরত প্রবাসী শাহাবুদ্দিন হক নামের এক যাত্রীও তার স্বজন ক্যানোপি-১ থেকে বাহিরে ট্রলি করে ব্যাগেজ নিয়ে ভাড়াকৃত প্রাইভেট কারের সামনে আসতে দেখা যায়। ট্রলি নিয়ে কোনো ভোগান্তি আছে কিনা’ জানতে চাইলে প্রবাসীর বড় ভাই সামছুদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন’ ‘না, এখন আর ট্রলি নিয়ে ভোগান্তি নেই। আমাদের পরিশ্রম কমে গেল।’ এতে করে কি উপকার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগেও মাথায় করে নিয়ে যেতে দেখেছি মালামাল। কিন্তু এখন আর সেই কষ্ট হচ্ছে না।’


দেখা গেছে বিমানবন্দরে প্রবেশে নেই বিধিনিষেধ। রয়েছে মানুষের জটলা। বেশিরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক, নেই করোনাসামগ্রী। এতে করে বাড়তে পারে সংক্রমণ। কেউ চেনে না কাউকে, তারপরও শরীরের সঙ্গে শরীরঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিয়জনের অপেক্ষায়। মাস্কবিহীন একজন রায়হান (২৮)। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়’ এখানে করোনা রোগী কে? সে হেঁসে বলে ওঠে বুঝতে পারছি, আমার মাস্ক নেই। তাহলে মাস্ক ছাড়া কেন এসেছেন? তিনি বললেন’ মাস্ক গাড়িতে রেখে এসেছি, ভুল হয়ে গেছে। ক্যানোপি-১ ও ক্যানোপি-২ এ গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত ট্রলি সারিসারি করে সাজানো। যার যখন প্রয়োজন নিয়ে যাচ্ছেন। আবার সেই ট্রলিগুলো কিছু সময় পর পর ট্রলির দায়িত্বে থাকা কর্মীরা গুছিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে রাখছেন।


ট্রলির কাজে নিয়োজিত রনি দেওয়ান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ট্রলি সম্পর্কে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, মাঝে ট্রলি সংকট নিয়ে কথা উঠেছিল। সেজন্য এটা যেন না হয়, তাই আমাদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে ট্রলি নিয়ে রেখে চলে যাচ্ছেন। আমরা সেগুলো একত্রিত করে রাখছি। যাদের প্রয়োজন এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন আর ট্রলি নিয়ে অভিযোগ নেই বলেও জানান তিনি। সরেজমিন দেখা যায়, ট্রলি ভোগান্তি থেকে রেহাই পেলেও ভোগান্তি আছে খাবার নিয়ে। টার্মিনাল এলাকায় খাবারের অতিরিক্ত দাম। নেই সৌচাগারের সুব্যবস্থা। করোনা সার্টিফিকেট নিয়েও আছে ভোগান্তি। করোনা টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৩ ঘণ্টা হলো টেস্ট করে এখনো রিপোর্ট হাতে পেলাম না।’ এটা যেন দ্রুত করা হয়, সে ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।


বিমানবন্দর টার্মিনালের নানা অনিয়ম যেন যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী। ১৫ টাকার পানির বোতল যেখানে ২০ টাকা, আর ৬০ টাকার কেক ৮০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাবারের দাম ৫ থেকে ২০ টাকা বেশি রাখছে টার্মিনালের ভেতরের দোকানগুলোয়। এখানে অসহায় যাত্রী ও আগত তাদের স্বজনরা। অপেক্ষায় থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকে খিদা নিবারণে বাধ্য হয়ে কিনছেন। এছাড়া উপায়ও নেই। খাবার কিনতে যেতে হয় বাহিরে। করোনার সময় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কেন এসেছেন জানতে চাইলে শাহজালাল মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, প্রবাস থেকে ১০ বছর পর আসছে ভাই। করোনার সংক্রমণ বেড়েছে জেনেও আবেগের তাড়নায় ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ছুটে এসেছি।


ছোট্ট শিশু সাইমুন জানায়, ‘আব্বু আসছেন কাতার থেকে, আর ছোট চাচ্চু আসছেন সৌদি থেকে। প্রায় ৫ বছর পর দেখা হবে। সেজন্য বিমানবন্দরে এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। তবে এখানে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের অনেক কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।’ নানা অভিযোগ নিয়ে কথা হয় আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খাবারের দাম এত বেশি নেওয়া হচ্ছে! এটা তো ঠিক না? এটি জালিয়াতি। এগুলোর সমাধান চাই আমরা।


করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ও করোনা নিয়ে কী কী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান ভোরের আকাশকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কোভিড সার্টিফিকেট নিয়ে আসা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, হ্যান্ড সানিটাইজার ব্যবহার করা ও মাস্ক পরা। যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেখুন, করোনা সম্পর্কে আমরা স্পষ্টভাবে নিয়মকানুন বলে দিয়েছি। কিন্তু অনেকে মানছেন না। জোর করে তো নিয়মকানুন শেখানো যায় না। সবাইকে নিজেদের জন্য হলেও সচেতন হতে হবে।’