logo
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:৫৩
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের পথে বাংলাদেশ
স্বীকৃতি দিল দুটি সংস্থা
তরিকুল ইসলাম

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের পথে বাংলাদেশ

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ইতোমধ্যেই বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোয় কূটনীতিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে গণহত্যার সংজ্ঞা মেনে জাতিসংঘে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত এবং দলিল পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চকে ‘জাতিসংঘ’র পক্ষ থেকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের দাবি ওঠে।


এ নিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর এবং জেনেভায় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের সঙ্গেও সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি হত্যা, রুয়ান্ডা ও কম্বোডিয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনাকে জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক সংঘটিত অপরাধযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ এবং লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন। সংস্থা দুটি গতকাল রোববার এ স্বীকৃতি দেয়। জেনোসাইড ওয়াচ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত অপরাধযজ্ঞকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতির ওপরে সংঘটিত অপরাধযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।


সংস্থা দুটি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আহŸান জানিয়েছে। গণহত্যা বিষয়ক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতির ফলে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক ১১ মার্চ ২০১৭ তারিখে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় বেগবান হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ক‚টনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করায় আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পাবে। বিশ্বের আরো নির্যাতিত জনগোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে একাত্ম হবে এতে করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ অনেকটা সহজ হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এবং তাদের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন করেছেন মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা। ইন্ট্যারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সহযোগিতাও নিতে পারে ঢাকা।


সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়। ২৫ মার্চের পর থেকে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মুক্তিকামি বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মিশনগুলোয় গণহত্যা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ক‚টনৈতিক তৎপরতা এখোন চলমান। দূতাবাসগুলোয় পঠানো হয়েছে নির্দেশনা। ক‚টনীতিকরা সেখানে যখনই কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলবেন, তখন যেন গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে আমরা আশাবাদী।’


ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসানের মতে, বাংলাদেশে ৫ হাজার বধ্যভ‚মির সন্ধান পাওয়া গেলেও এর মধ্যে ১ হাজার বধ্যভ‚মি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব বধ্যভ‚মি থেকে হাড়গোড় উত্তোলন কারা হয়েছে। গণহত্যা প্রমাণের জন্য ফরেনসিক প্রমানের কাজ চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক এবং অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনের মতে, বাংলাদেশের জন্ম গণহত্যার মতো একটি ভয়াবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান এবং তাদের দোসরদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এ গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি দরকার।