logo
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:৫৭
‘ফুলের গ্রামে’ লোকসানের শঙ্কা
বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ

‘ফুলের গ্রামে’ লোকসানের শঙ্কা

রায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী গ্রামের একজন কৃষক তার ফুল ক্ষেতে কাজ করছেন। সংগৃহীত ছবি

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী গ্রাম। যত দূর চোখ যায় দেখা যায় ফুলের সমারোহ। পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা।

তবে এ বছর বৃষ্টির কারণে লোকসানের পথে তারা। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, শুধু সাবদীই নয়- এ উপজেলার দীঘলদি, মাধবপাশা, আইছতলা ও সোনারগাঁওয়ের ফরদী, দরিগাঁও, এলাহিনগর, শম্ভুপুরা, একরামপুরাসহ ১০টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হয়।

গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর, রক্তজবাসহ নানা বাহারি রঙের ফুল চাষ করে এসব গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তারা পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসকে ঘিরে তারা প্রতি বছর ফুল চাষ করেন। তবে নানা কারণে এসব গ্রামের ফুলচাষিদের সংখ্যা কমেছে অনেক। এবারও বৃষ্টির কারণে অন্য বছরের তুলনায় ফুল চাষ কম হওয়ায় হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

সাবদী গ্রামের ফুলচাষি অঞ্জনা রানী বলেন, গত বছর অনেক ফুল বিক্রি করেছি। আমাদের ফুল রাজধানীর শাহবাগের পাশাপাশি সারাদেশে যায়। আমরা তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ফুল চাষ করি। আমাদের অনেকে ফুল বিক্রি হয় বাগানে। কারণ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে তাদের পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন।

‘তবে এবার কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে অনেক ফুলগাছ মরে গেছে। তাই আবার নতুন করে ফলন করেছি। কিন্তু ফুল আসতে সময় লাগবে। এবার লাখ তো দূরের কথা, চালান উঠাইতে কষ্ট হইব’, বলেন অঞ্জনা রানী।

একই গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিতে অনেক ফুলগাছ মরে গেছে। আমরা বছরের এই সময়টা অনেক ফুল বিক্রি করি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দিবসের আগের দিন। তবে এবার কি হবে জানি না, কারণ বৃষ্টির কারণে গাছ মরে গেছে। তাই ফুলও কম। তার পরও আশা করছি পরিস্থিতি ভালো থাকলে বিক্রি বেশি হবে।’

দিগলদী গ্রামের ফুলচাষি শিল্পী আক্তার বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে চাষিরা ফুল চাষ বন্ধ করে সবজি চাষের দিকে যাচ্ছেন। কারণ প্রতি বছর ফুল চাষে নানা সমস্যা দেখা দেয়। আগে আশপাশে মিলিয়ে কয়েক হাজার চাষি ছিল; কিন্তু তা কমতে কমতে এখন এক শ’র ঘরে।

‘উপজেলা প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা না করলে সামনে ফুল চাষ আরও কমে যাবে। তাই আমরা ফুলচাষিরা সরকারের কাছে সহযোতিা চাই। তা হলে ফুলের গ্রামের আগের রূপ ফিরে আসবে’, বলেন শিল্পী আক্তার।

শীতলক্ষ্যা নদ পার করে এসব গ্রামের বাহারি রঙের ফুল সারাদেশে সরবরাহের পাশাপাশি মাসজুড়ে বাগানগুলোয় থাকে ফুলপ্রেমীদের আনাগোনা। প্রতিদিনই রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নানা বাহারি রঙের ফুলের গন্ধে নিজেকে হারিয়ে প্রকৃতির স্বাদ নেন।

অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকা ফেরা প্রবাসী বাবুলও এসেছিলেন সাবদী। এই ফুলপ্রেমী বলেন, আমি মনে করি যারা ফুল চাষ করেন তাদের আরও উদ্যোগী করতে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন। ফুলের চাষের কারণে এসব গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বাড়ে। ফলে ফুল চাষে চাষিদের আরও সুযোগসুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।

রাজধানী থেকে সপরিবারে আগত দর্শনার্থী তাবাসুম জানান, ফুলের গ্রাম নামে পরিচিত সাবদী আমার কাছে ভালো লাগে। তাই প্রতি বছর ফুলের বাগানে বেড়াতে আসি। আমার সঙ্গে আমার পরিবারের সদস্যরাও আছেন। তারা ঘুরছে। তবে এবার ফুল কম, গত বছর আরও বেশি ছিল।

আগের বছর করোনা মহামারি ও জমিতে পানি থাকায় অনেক ফুলচাষি কমেছে। এবারও বৃষ্টিসহ নানা সংকটকে লোকসানের পথে ফুলচাষিরা। এ কারণে প্রতি বছর এসব গ্রামের ফুলচাষির সংখ্যা কমছে বলে জানান বন্দরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সীমা মণ্ডল।

তিনি বলেন, অন্য ফসলে চলে যাওয়া ফুলচাষিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। তারা যাতে আগামীতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে জন্য আমরা নানারকম পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. নূর জাহান জানান, গত বছর প্রায় ৭০ হেক্টর আবাদি জমিতে ২৪ ধরনের ফুল চাষ করা হয়েছিল। তবে এবার তা আরও কমেছে। বড় চাষিরা ঝুঁকি নিলেও ক্ষুদ্র চাষিরা অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন। ফলে গ্রামগুলোয় আগের তুলনায় ফুল চাষ কমেছে। এবার ৬২ হেক্টর আবাদি জমিতে ফুল চাষ হয়েছে।’

তিনি জানান, ফুলচাষিদের পরামর্শ দেওয়াসহ নানাভাবে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। গত বছর তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের সমস্যা সমাধানে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।