logo
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৯
কুয়াকাটায় কমছে পর্যটক, লোকসানের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের
জহির রায়হান, বরিশাল ব্যুরো

কুয়াকাটায় কমছে পর্যটক, লোকসানের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে প্রতিনিয়ত কুয়াকাটায় ভিড় করেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে এ সমুদ্রসৈকতে। ভাটা পড়েছে পর্যটকে। খালি রয়েছে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল। লোকসানের মুখে পড়ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এখানকার হোটেল আবাসিক মোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বার্মিজ মার্কেট, সি-বিচের ঝিনুক মার্কেট, রাখাইন মহিলা মার্কেট, শুঁটকির দোকান, রেস্তোরাঁ, মিউজিয়াম, ইলিশপার্কসহ প্রায় ৩২ সেক্টরের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় স্থানীয় ব্যবসায়ী রয়েছে। আর হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত ৭০টিসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। তবে বর্তমানে পর্যটক নেই সাগরকন্যায়। খালি পড়ে আছে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল।

কুয়কাটার ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের পর থেকেই পর্যটক কমে গেছে। এতে খালি পড়ে আছে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

কুয়াকাটায় এসেছেন বরগুনার খাইরুল ইসলাম আকাশ। তিনি বলেন, ‘শুটকি কেনার জন্য সকালে কুয়াকাটায় আসি। কেনা শেষে ভাবলাম একটু সি বিচ এলাকা ঘুরে দেখি। সেখানে দিয়ে দেখলাম পর্যটকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কম। যারা ঘুরতে এসেছেন তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।’

হোটেল কুয়াকাটা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকার মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহেল দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা থাকার কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক ও ভ্রমণার্থীদের আসতে অনীহা দেখা গেছে। কেননা পকেটে টাকা না থাকলে কোনো আনন্দফূর্তি ভালো লাগে না কারো। তারপর আবার করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সেই ভয়ে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে পাঁচ শতাংশ কম ব্যবসা হয়েছে জানুয়ারি মাসে। এখন শুক্র-শনিবার কিছু পর্যটকের সমাগম থাকলেও বাকি পাঁচ দিন বুকিংয়ের করুণ অবস্থা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রতিমাসে লোকসানই হবে।’

খরচের কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘পর্যটক কম হলেও আমাদের হোটেল খোলা রাখতে হয়। হোটেলগুলো পরিচালনা করতে স্টাফ ও বাবুর্চী বেতন, বিদ্যুৎবিলসহ নানা খরচে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। সে তুলনায় এখন তেমন কোনো আয় হচ্ছে না।’

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বর্তমানে করোনার ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে। এতে কুয়াকাটায় কমেছে পর্যটক। ফলে পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩২ সেক্টরের ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ পরিবহণ ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছে। করোনার প্রার্দুভাব আরো বাড়লে এসব ব্যবসায়ী পুরোপুরি পথে বসবে।’

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম মোতালেব শরিফ বলেন, ‘২০২০-২১ সালে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকায় পর্যটন মৌসুমে প্রায়ই হোটেল-মোটেল বন্ধ ছিল। সেই লোকসান পোষাতে ২০২২ সালকে ব্যবসায়ী বছর হিসেবে ধরে নিয়েছি। কিন্তু এ বছরের শুরুতেই আবারও করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন লকডাউন না থাকলেও করোনার কারণে কুয়াকাটার সি বিচ এলাকায় পর্যটকের সংখ্যা কম। বিগত বছরের তুলনায় এই মৌসুমে পর্যটক ও ভ্রমণার্থীদের সংখ্যা কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল পরিচালনা করলেও পর্যটক কম আসায় লোকসানের মুখে পড়ছে এখানকার ব্যবসায়ীরা।’