logo
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৩৯
ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন

প্রতীকী ছবি

ভাষা আন্দোলন শুধু রাজধানী ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মুহূর্তেই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার পাশাপাশি পূর্ববঙ্গের জেলা ও মহকুমা শহরে ভাষা আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণায় জ্বলে উঠেছিল।

আটচল্লিশে আন্দোলন ছিল অনেকটা সীমাবদ্ধ পরিসরে। বায়ান্ন সালে তা ব্যাপক আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলিত শিখা গ্রাম-গঞ্জের শিক্ষায়তন পর্যন্ত স্পর্শ করেছিল। কোনো কোনো শহরে ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমজীবী মানুষ ও জনতার অংশগ্রহণ আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন ঘটায়।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা অনন্য। বিশেষ করে বায়ান্নর আন্দোলনে সংগঠক মমতাজ বেগমকে কেন্দ্র করে। নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল ঢাকার তুলনায় ব্যাপক হারে।

ছাত্রী ও মহিলাদের অংশগ্রহণ এবং মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে এই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য শ্রমজীবী শ্রেণির অংশগ্রহণ।

রাজনৈতিক নেতা শামসুজ্জোহার পাশাপাশি আলমাস আলী, শফি হোসেন, ফয়েজ আহমদ প্রমুখ শ্রমিকনেতার কারণে নারায়ণগঞ্জের জনসভায় অনেক সময়ই ছিল শ্রমিক প্রাধান্য। নারায়ণগঞ্জও হয়ে উঠে মিছিলের শহর। কিন্তু সেখানকার শিল্পাঞ্চল থেকে হাজার হাজার শ্রমিক জনসভায়, কখনো মিছিলে যোগ দেন।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামও ১৯৫২ সালে আন্দোলন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র ও শিক্ষিত শ্রেণি, সাহিত্যকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর সচেতন অংশের সঙ্গে এই আন্দেলনে অংশ নেন শ্রমিকরাও।

রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতা চৌধুরী হারুণ-উর-রশীদ, প্রগতিবাদী সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী, আওয়ামী মুসলিম লীগের এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, তমদ্দুন মজলিসের আজিজুর রহমান, বিপ্লবী বিনোদ দাশগুপ্ত, বামপন্থি সাহিত্যিক গোপাল বিশ্বাস আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও ভাষার লড়াই বিশেষ মাত্রা স্পর্শ করে। এর প্রভাব পড়ে রাজনৈতিক মহলে।

ময়মনসিংহ এই আন্দোলন দ্রুত যায়। উদ্দীপ্ত করে ছাত্র-জনতার চেতনা। শুরু হয় সভা, সমাবেশ, মিছিল, স্লোগান। ২১ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাজার-হাট বন্ধ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে থানা পর্যায়ে। ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ হয়ে মহকুমা শহর জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ সর্বত্র আন্দোলনের ব্যাপ্তি ছিল।

আন্দোলনের গুরুত্ব বিচারে শহর রাজশাহীর ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ১৯৪৮ সাল থেকে আন্দোলনের সূচনা হয়। এই শহরের আন্দোলন বানচাল করতে উর্দু-সমর্থক ও সরকারের ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের আক্রমণও ছিল। স্কুল-কলেজগুলো ছিল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। ছাত্রনেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আতাউর রহমান, একরামুল হক, মোহাম্মদ সুলতান, আবুল কাশেম চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন প্রধান প্রমুখ আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন।

রাজশাহীতেও প্রগতিশীল সাহিত্যচক্র ‘দিশারী’ বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু, এস এ বারি এটি, আবুল কালাম চৌধুরী, এম এ গাফফার (মেডিকেল ছাত্র) প্রমুখ।

বগুড়ায় ১৯৪৮ মার্চের আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলনের সূচনা। কবি আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১১ মার্চের মিছিলে অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যোগ দেন। বগুড়ায় বাহান্নর ভাষা

আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই ছিল সর্বদলীয় চরিত্রের। ছাত্রছাত্রী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন।

পাবনা ভাষা আন্দোলনের সূচনা ১৯৪৮ মার্চ থেকে। এর সূচনা ঘটান পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্ররা। গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র কংগ্রেস প্রভৃতি সংগঠনের চেষ্টায় এ আন্দোলন রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে গড়ে ওঠে। মাহবুবুর রহমান খান ও আমিনুল ইসলাম বাদশাকে যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করে আন্দোলন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।