logo
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:২৫
ডা. নিতাই হত্যার ১০ বছর: থেমে আছে মামলার বিচারকাজ
সাব্বির আহম্মেদ সজিব

ডা. নিতাই হত্যার ১০ বছর: থেমে আছে মামলার বিচারকাজ

হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পার হলেও বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার বিচার শেষ করা যায়নি।

আলোচিত এ মামলার বিচার চলছে ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে। গত ২৬ জানুয়ারি আদালতে আসামিরা জানান যে, এ মামলায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই। এ বক্তব্যের সমর্থনেই তারা সাক্ষ্য দেবেন। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা তাদের বিরুদ্ধে বানানো সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বিচারক মো. নজরুল ইসলাম আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য নেবেন। এ আদালতের সাঁটলিপিকার খাদেমুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এর আগে দীর্ঘদিন অতিমারির ছুটি থাকায় মামলার বিচারকাজ বারবার পিছিয়ে যায়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট ভোররাতে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক ভবনে খুন হন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পর্ষদের সদস্য ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই। ওই রাতে নারায়ণের দোতলা বাড়িতে শুধু তার মা ছিলেন। তার স্ত্রী লাকী চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামে। ডা. নিতাই হত্যার ঘটনায় পরের দিন পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর বনানী থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলায় সব আসামিই নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিম‚লক জবানবন্দি দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে মামলাটির বিচার মাঝপথে এসে থেমে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের শেষদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শেষ সাক্ষ্য নেওয়ার পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। এর আগে তিন বিচারক বদলি হয়েছেন।

এ আদালতে এখন নতুন বিচারক নজরুল ইসলাম। এই তথ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুল হাসান। পেশকার আব্দুল খালেক জানান, এ মামলার কোনো আসামির জামিন হয়নি। এর মধ্যে মামলার বাদী ডা. নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্ত ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি মারা গেছেন। মা মঞ্জু রানী দত্ত অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।

ডা. নিতাইয়ের ভাই গোপাল কৃষ্ণ দত্ত এর আগে আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বড় হতাশা নিয়ে বাবা চলে গেছেন। নিতাই হত্যার মনোবেদনায় তার শরীর ভেঙে পড়েছিল। আর মায়ের অবস্থায়ও একই রকম। কোনো আশা বা সান্ত্বনাই তাকে সারিয়ে তুলতে পারছে না। বাবার মতো মাও মনে করছেন তিনিও বিচারের শেষ দেখে যেতে পারবেন না।

২০১৩ সালের ২২ জুলাই মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের পর গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বাদী নিহতের বাবা তড়িৎ কান্তি দত্তের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

পরে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নিতাইয়ের স্ত্রী ডা. লাকী চৌধুরী, নিতাইয়ের ভাই গৌতম দত্ত, ১৫ অক্টোবরে নিহতের আত্মীয় সুদত্ত চৌধুরী ও শাশুড়ি ডলি চৌধুরী সাক্ষ্য দেন। সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বরে এ আদালতে সাক্ষ্য দেন আসামিদের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিম কেশব রায় চৌধুরী ও শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান।

এর আগে জামিন না পাওয়ায় এজলাসে নিতাইয়ের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আসামি কামরুল হাসান অরুণের অশোভন আচরণ ও চিৎকারের কারণে ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ও পলাতক আসামিদের আইনজীবী মামলাটির বিচারে অনীহা প্রকাশ করেন। আর সে কারণেও সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিচার থেমে গেছে বলে এ আদালতের কর্মচারীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হোসেন মিজি, মো. বকুল মিয়া, মো. সাইদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদ, ফয়সাল, মাসুম ওরফে পেদা মাসুম, মো. আবুল কালাম ওরফে পিচ্চি কামাল ও সাইদুল। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চুরির সময় দেখে ফেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের এই নেতাকে হত্যা করা হয়।

এর আগে মামলার বিচারকালে (২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর) প্রায় সব আসামি বিশেষত নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে অশোভন আচরণ ও অশালীন কথাবার্তা বলেন। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চিকিৎসক নিতাইয়ের বেশ কয়েকজন সহকর্মী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন' চিকিৎসক আ ফ ম আখতার হোসেন, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, এ কে এম আকরামুল হক, মাহমুদ মাসুম আক্তার, বশীর আহমেদ ও বরকতউল্লাহ। সাক্ষ্য দেন আসামিদের স্বীকারোক্তিম‚লক জবানবন্দি গ্রহণকারী কয়েকজন হাকিম।

চুরি, চোরাই মাল গ্রহণ ও হত্যার অপরাধে আসামিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গাজী আতাউর রহমান ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চুরি করার সময় দেখে ফেলায় ডা. নিতাইকে হত্যা করা হয়। আসামিরা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ২টি স্বর্ণের বালা নিয়ে যায়।

এ পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে নিতাইয়ের পরিবারের সন্দেহ ছিল, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়োগ নিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ মামলার আসামি রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও সাঈদ ব্যাপারী ওরফে আবু সাঈদকে সংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যে মামলায় বছরের পর বছর পার হলেও অভিযোগপত্র জমা পড়ছে না।