বাংলাদেশে কানাডার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে দুদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিল রহমান।

গতকাল সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে কানাডা-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন স্ট্রেংদেনিং কমার্শিয়াল রিলেশনসের ভার্চুয়াল সভায় এ তথ্য জানান তিনি।

দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কানাডার ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা একটি বড় বাধা উল্লেখ করে হাই কমিশনার জানান, ঢাকায় কানাডিয়ান হাই কমিশনে দেশটির ভিসা অফিস স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের ব্যাপারে বিজনেস কাউন্সিল অব কানাডার (বিসিসি) আগ্রহ রয়েছে। সংগঠনটি কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে বাংলাদেশের খাতভিত্তিক তথ্য জানতে চেয়েছে।

সভায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সুপারিশ ও প্রতিবেদনগুলো বিসিসির কাছে পাঠানোর প্রস্তাব করেন হাই কমিশনার। কানাডা-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে এফবিসিসিআই ও বিসিসির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়েরও প্রস্তাব করেন তিনি।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি জানান, কানাডিয়ান উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য প্লাস্টিক শিল্প অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত। অভ্যন্তরীণ এই বিশাল বাজারের পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও রপ্তানি সম্ভাবনা প্রবল। তা ছাড়া তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রকৌশল, অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবেও প্লাস্টিক পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে।

এর আগে প্লাস্টিক শিল্পের বাজার ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ।

তিনি জানান, এ খাতে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ কাজ করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রপ্তানি হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বছরে গড়ে ৪ শতাংশ হারে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্লাস্টিকের ২৯টি উপখাতের সবকটিই রপ্তানি সম্ভাবনাময়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের দেওয়া নানা নীতি সহায়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

সভায় কানাডা-বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ক্যানচ্যাম বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদ রহমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডিয়ান উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম বড় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হতে পারে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়নে কানাডিয়ানরা অংশ নিতে পারেন।

এ জন্য দেশটির বিনিয়োগ ব্যাংক এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডা (ইডিসি) ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনের মাধ্যমে এ দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে কানাডার পেনশন ফান্ড থেকেও বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, দ্বি-পাক্ষিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট চুক্তি, বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি সই, ভ্যানক্যুভারে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল অফিস ও চট্টগ্রামে কানাডার অনারারি কনসাল জেনারেল অফিস স্থাপন, কানাডার নাগরিকদের বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান, জিপিটির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১০০ একর জমিতে কানাডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ঘোষণার মাধ্যমে দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক দৃঢ় করা সম্ভব বলে মনে করেন ক্যানচ্যামের সভাপতি মাসুদ রহমান।

বৈঠকে উপস্থাপিত আরেকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন ভ্রমণ ম্যাগাজিন এর সম্পাদক ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাক্ট ফ্যাকাল্টি আবু সুফিয়ান।

বৈঠকে ৪ থেকে ৫টি খাতকে সুনির্দিষ্ট করে সেসব খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন ওয়ার্কিং গ্রুপের আরেক সদস্য ও এফবিসিসিআই পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন সাস্কাচেওয়ান ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট পার্টনারশিপের সভাপতি ক্রিস ডেকার, গোলিং ডব্লিউএলজি’র এনার্জি সেক্টর গ্রুপের প্রধান টম টিমিনস, এফবিসিসিআই মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন কানাডিয়ান হাই কমিশনের সিনিয়র ট্রেড কমিশনার অ্যাঞ্জেলা ডার্ক।