চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চারজনসহ ১০ জন নৌকার প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। স্থগিত হওয়া দুটিতেও এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। বাকি চারটি ইউপির মধ্যে দুটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং অপর দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
১৬ ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত যেসব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন কেওঁচিয়া ইউনিয়নে ওচমান আলী, পুরানগড়ে আ.ফ.ম. মাহবুবুল হক সিকদার, মাদার্শায় আবু নঈম মোহাম্মদ সেলিম ও সাতকানিয়া সদরে মোহাম্মদ সেলিম।
চেয়ারম্যান পদে ভোট হওয়া ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়নের ৩টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ইউনিয়নে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধানের চেয়ে স্থগিত হওয়া কেন্দ্রে ভোট সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাঞ্চনা ও খাগড়িয়া ইউপির চূড়ান্ত ফল হয়নি।
অন্য ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে যারা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে চরতী ইউনিয়নে মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী (নৌকা) পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মঈনুদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন চার হাজার ১০২ ভোট।
ঢেমশা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র মির্জা আসলাম সরওয়ার (মটর সাইকেল) চার হাজার ৪৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিদুয়ান উদ্দিন (নৌকা) পেয়েছেন দুই হাজার ৫৫ ভোট।
ধর্মপুর ইউনিয়নে নাসির উদ্দিন টিপু (নৌকা) পাঁচ হাজার ৯৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ইলিয়াছ চৌধুরী (আনারস) পেয়েছেন ২১০ ভোট।
কালিয়াইশ ইউনিয়নে হাফেজ আহমদ (নৌকা) ছয় হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ফেরদৌস চৌধুরী সোহেল (আনারস) পেয়েছেন তিন হাজার ৪৫৫ ভোট।
নলুয়া ইউনিয়নে মো. লেয়াকত আলী (নৌকা) আট হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী (আনারস) পেয়েছেন এক হাজার ২৬৫ ভোট।
ছদাহা ইউনিয়নে মোরশেদুর রহমান (মটরসাইকেল) পাঁচ হাজার ৯০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রফিক মাহামুদ (ঘোড়া) পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৪৯ ভোট ও মো. মোসাদ হোসাইন চৌধুরী (নৌকা) পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৭৫ ভোট।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নে মো. জসিম উদ্দিন (নৌকা) পাঁচ হাজার ৭৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. সেলিম উদ্দিন চৌধুরী (মটর সাইকেল) পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৮৯ ভোট।
পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নে মো. রিদুয়ানুল ইসলাম (আনারস) এক হাজার ৬৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু তাহের জিন্নাহ (নৌকা) পেয়েছেন এক হাজার ৫২৭ ভোট।
আমিলাইশ ইউনিয়নে মোজাম্মেল হক চৌধুরী (টেলিফোন) তিন হাজার ২২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এইচএম হানিফ (ঘোড়া) পেয়েছেন দুই হাজার ৬৬৭ ভোট।
বাজালিয়া ইউনিয়নে তাপস কান্তি দত্ত (নৌকা) পাঁচ হাজার ৬৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুল্লাহ চৌধুরী (আনারস) পেয়েছেন তিন হাজার ৯৮৭ ভোট।
খাগরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আকতার হোসেন (নৌকা) স্থগিত থাকা দুই কেন্দ্র ছাড়াই ছয় হাজার ৬৫৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জসিম উদ্দিন (মটর সাইকেল) পেয়েছেন চার হাজার ৭৯০ ভোট।
কাঞ্চনা ইউনিয়নে রমজান আলী (নৌকা) স্থগিত থাকা একটি কেন্দ্র ছাড়াই পাঁচ হাজার ৪৬৩ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ সালাম (মটর সাইকেল) পেয়েছেন তিন হাজার ৬০০ ভোট।
এই দুটি ইউনিয়নে চূড়ান্ত ফল স্থগিত রয়েছে।
সোমবার দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর স্কুলছাত্রসহ দুজনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে হয় চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ার উপজেলার ১৬টি ইউপির নির্বাচন। সকাল থেকে প্রায় সব ইউপিতে থেমে থেমে দুপক্ষের গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
ভোটের শুরুতেই সাতকানিয়ার খাগরিয়ার গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরপরই ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার।
দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের সমর্থক মনে করে তাসিব (১৩) নামের এক স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বাজালিয়ার দুই নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী তাপস কান্তি দত্তের সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুল্লাহ চৌধুরীর সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আব্দুর শুক্কুর নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান।