logo
আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:৩৬
মানবিক পোস্টের আড়ালে প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবিক পোস্টের আড়ালে প্রতারণা

আহা! কি মানবিক। দেখে যে কেউ মায়ায় পড়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। মাত্র তিন থেকে চার বছরের ফুটফুটে একটি শিশুসন্তানের দুটি ছবি। পায়জামা পরা থাকলেও শরীরে নেই কোনো জামা। পেট ফুলে গেছে, যা অস্বাভাবিক। পাশেই এক অসহায় মা দুহাত জোড় করে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনুরোধ করছেন মনে হয়। অপর ছবিতে মাঝখানে ওই শিশুটি, দুই পাশে কান্না করছে বাবা-মা।


ছবি দুটির ওপরে ক্যাপশনের ঘরে লেখা, ‘আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে আমাদের যার যা সামর্থ্য তাই দিয়ে শিশুটিকে সাহায্য করি। আমরা প্রবাসে ও দেশে ধনীদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। সাহায্য পাঠানোর জন্য পার্সোনাল- বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট দেওয়া রয়েছে।’


ওপরের কাহিনি পড়ে সবার মায়া লাগা বা সাহায্য পাঠানোই স্বাভাবিক। এটি যে একটি কৌশলী প্রতারণা তা হয়তো মানতেও নারাজ অনেকেই। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে চক্রটি। যেকোনো ঘটনা অতি দ্রæত মানুষের নজরে আনতে বর্তমান সময়ে ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু চক্র প্রতারণার মাধ্যম হিসেবেও বেছে নিয়েছে এটিকে।


‘আমরা বৃহত্তর পুরান ঢাকাবাসী’ গ্রুপে দেখা যায় চারটি ছবি। প্রথম ছবিতে দেখা যায়, ১১-১২ বছরের দুটি হাতবিহীন একটি মেয়ে, চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। পরের তিনটি ছবিতে দুজন মেয়ে ও একজন ছেলে। তিনটির একটিতে দেখা যাচ্ছে দুই মেয়ের হাতে টাকা দিচ্ছেন। ক্যাপশনের ঘরে লেখা দেখতে এসে ১০ হাজার টাকা সাহায্য করলাম। পরে পার্সোনাল তিনটি বিকাশ, রকেট ও নগদ অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাহায্য পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।


সিটিটিসি বলছে, সা¤প্রতিক সময়ে একজন অসুস্থ শিশুর সাহায্য সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্ট পুনাক সভানেত্রীর নজরে আসে। তিনি সেই শিশুটির পিতাকে চিকিৎসাপত্রসহ সাহায্য গ্রহণ করার জন্যে আহবান করেন। কিন্তু সাহায্যপ্রার্থী হাজির না হয়ে নানা টাল বাহানা করে।


তখনই ঘটনাটি খটকা লাগে পুনাক কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে একই ছবি দিয়ে আরেকটি পোস্ট দেখলে পুনাক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয় এবং তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে বিষয়টি অনুসন্ধান করার অনুরোধ করে।


অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সাহায্যপ্রার্থীরা মূলত এই পদ্ধতিতে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায়দের সাহায্যের নামে প্রতারণার অভিযোগে ছদ্মবেশী প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।


গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. রেজাউল ইসলাম, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. মেহেদী হাসান ওরফে আকাশ ও মো. তানভীর আহাম্মেদ। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৭টি ফেসবুক আইডি, ১০টি মোবাইল, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টসহ ১৫টি সিম কার্ড ও প্রতারণালব্ধ নগদ দুই লক্ষ টাকা উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।


এ সংক্রান্তে সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ইন্টারনেট রেফারেল টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রæব জ্যোতির্ময় বলেন, একদল প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট থেকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন অসুস্থ ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে প্রতারণা করে আসছিল। এ রকম একটি ফেক আইডি গফ Jewell Rana (www.facebook.com/nillakasher.rajkumer) থেকে ফেসবুক গ্রæপ ‘নক্সে বন্দী হাসানুর রহমান হোসাইন সাইবার টিম’ (www.facebook.com/groups/303489874682063)- এ অজ্ঞাত অসুস্থ একটি শিশুর ছবি যুক্ত করে। ‘বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী বিশ্বাস’ (www.facebook.com/ 100070698429110) নামক অপর একটি ফেসবুক ফেক আইডি থেকে ‘আমরা বৃহত্তর পুরান ঢাকাবাসী’ (www.facebook.com/groups/698756800935587) নামক ফেসবুক গ্রæপসহ প্রায় ২৭টি আইডি থেকে আরো বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে মিথ্যা সাহায্যের আবেদন করা হয়। সাধারণ মানুষের আবেগের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র।


তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি রংপুর থেকে রেজাউল, হাফিজুল ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন রাত্র ১০ টায় মিরপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়।


গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) নিয়মিতভাবে দুস্থ ও আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করে আসছে। বর্তমান পুনাক সভানেত্রী জীশান মির্জা দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে সারাদেশে সমাজসেবার কাজ জোরদার করা হয় যা দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।