প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারায় এটিই প্রতীয়মান হয়েছে, জনগণ কখনো ভুল করে না। তিনি বলেন, ‘জনগণ কখনো ভুল করেনা, এটা হল বাস্তবতা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেটাই প্রতিভাত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে এবং জনগণের ভোটের অধিকারে। জনগণই ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্রার্থী নির্বাচন করবে, যারা তাদের জন্য কাজ করবে। কারণ, জনগণ কখনো ভুল করে না, এটা হলো বাস্তবতা। কাজেই জনগণের ওপর আস্থা রেখেই আমরা সব রকম কাজ করি।’
নারায়ণগঞ্জে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সব মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে একটা বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো।
নারায়ণগঞ্জবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দলের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করায়ও তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিজের ভোগ-বিলাসের কথা না ভেবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে না বলেই সবসময় অপপ্রচার চালায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনেও মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আইভী। এবারের নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন নির্বাচিত হন। ২৭ জানুয়ারি বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশিত হয়।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পান ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট।
জিয়াউর রহমান থেকে খালেদা জিয়া- বিএনপির সময়ের বিভিন্ন নির্বাচন নামের প্রহসনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনের অর্থ বোঝে না। জনগণের ভোটের অধিকার স্বীকার না করলেও তারা ভোট চুরি করতে জানে।
বিএনপির প্রশ্নবিদ্ধ শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে জনগণের কাছে তারা কীভাবে ভোট চাইতে যাবে- সে প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বিএনপির নানা অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতেই বিএনপির সৃষ্টি। জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাওয়ার কোনো অভ্যাসই তাদের ছিল না। বরং কেড়ে নেওয়া, চুরি করে নেওয়াই তাদের অভ্যাস ছিল। তারা গণতন্ত্রের অর্থও বোঝে না, সে শিক্ষাই তাদের নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি বোঝে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ আর বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানুষ হত্যা আর নির্যাতন, মানুষের ঘর-বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল। আর সে সুযোগ পাচ্ছে না বলেই তাদের খুব আক্ষেপ।
‘বিএনপির নেতৃত্ব বলে কিছু নেই’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান প্রসঙ্গে বলেন, একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে জেলে বন্দি। যদিও তাকে দয়া করে ঘরে থাকতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যজন ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং দুর্নীতির মামলার সাজাপ্রাপ্ত ‘ফিউজিটিভ’। আমেরিকার এফবিআইর তদন্তে যার দুর্নীতি প্রমাণিত এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আর রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে যে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যে দলের চেয়ারপার্সন হয় জনগণ কেন তাকে ভোট দিবে? আর তারা জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাসও করে না, এটা হলো বাস্তবতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের মানুষের ভোটাধিকার ক্ষমতা ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ৭৭ সালের হ্যাঁ/না ভোট, ৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন এবং ৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন- সবই ছিল প্রহসন।’
একই ধারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অব্যাহত রেখে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন আয়োজন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেও ৩০ মার্চ গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন।
শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, জনগণ তাদের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ভোট দিয়েছে, তার মূল্যায়ন করতে হবে। আর উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন বলে যে শপথ নিয়েছেন সেই শপথটা ভুলবেন না। যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছেন তাও ভুলবেন না। মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। কেননা যতটুকু আপনি দিতে পারবেন- তাতেই আপনার তৃপ্তি। ভোগ বিলাসে কোনো তৃপ্তি নেই। আর রাজনৈতিক নেতা হতে হলে জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়েই আপনাদের কাজ করতে হবে।
জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে তিনি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার পাশাপাশি তার সরকার জনকল্যাণে যেসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে- তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নেও তিনি জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য রাখার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষ কিন্তু খুব সচেতন। কাজেই সেটা মাথায় রেখেই আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে একটানা ১৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার সুযোগ পাওয়াতেই দেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। করোনার মধ্যেও জিডিপি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে দেশের উন্নয়নের খণ্ডচিত্রও বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: বাসস