logo
আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:৪৯
নীলা হত্যা মামলা: অভিযোগ গঠন শুনানি ১৯ মে
আদালত প্রতিবেদক

নীলা হত্যা মামলা: অভিযোগ গঠন শুনানি ১৯ মে

নীলা

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাভারের দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলা রায় (১৪) হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফায়জুন্নেসা অভিযোগ গঠনের এই দিন ধার্য করেন।

এদিন হাজতি আসামি মিজানুর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা সাকিব ও সেলিম পালোয়ানও এদিন আদালতে হাজির ছিলেন। সাকিবের পক্ষে আইনজীবী আরিফা আক্তার রেবা এবং সেলিমের পক্ষে দিল মাহফুজা পারভীন পূর্বশর্তে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। সাকিবের আইনজীবী আরিফা আক্তার রেবা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এদিন অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও প্রস্তুতি না থাকায় রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষ অভিযোগ শুনানি পিছিয়ে দিতে মৌখিকভাবে আবেদন করি। তাই বিচারক অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন।’

নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নির্মল কুমার দাস আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি বদলি হয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসে। মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯ ধারায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ ছাড়া মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ১৮ জনকে।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল গোলাম দস্তগীর ভোরের আকাশকে জানান, ‘ঘটনার পর ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মানিকগঞ্জের চারীগ্রাম এলাকা থেকে একইদিনে মিজানের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ওইদিন সাকিব ও জয়কে সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকার একটি ইটভাটার পাশ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মিজান। এরপর মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান, মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকা এবং অপর দুই আসামি সাকিব ও সেলিম উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তিলাভ করেন।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাভার পৌরসভার পালপাড়া এলাকায় নীলাকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পৌর এলাকার কাজী মোকমা পাড়ার এক বাড়িতে তার পরিবার ভাড়া থাকতো। নীলা রায়ের হত্যার ঘটনায় মিজান ও তার বাবা-মাকে আসামি করে সাভার থানায় হত্যা মামলা করেন নীলার বাবা নারায়ণ রায়। ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে একজন শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন নারায়ণ রায়।

এজাহারে আরো জানা হয়, ঘটনার আগে বছর দেড়েক ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল কাজি মুকমাপাড়ার পাশের এলাকা ব্যাংক কলোনির আব্দুর রহমানের ছেলে কলেজছাত্র মিজান। নীলা রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তাঁর ভাই অলক রায় তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর মিজান রিকশার গতিরোধ করেন। এরপর অস্ত্রের মুখে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে পালপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়।

সাভার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উল্টো দিকের একটি গলির ভেতরে নিয়ে নীলাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপুযর্পরি আঘাত করে নীলার ডান চোখের নীচে, বুকের ডান পাশে পিঠের ডান পাশে, পেট, হাত, দুই উরুসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে মিজানুর নীলাকে হত্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার ব্যাগ থেকে ধারালো চাপাতি বের করে ঘাড়ের বা পাশে আঘাত করে। নীলা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলে অলকসহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মিজানুর শরীরে রক্তমাখা অবস্থায় পালিয়ে যায়।

নীলাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা রোডের প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নীলার মৃত্যু হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, নীলাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে মিজানুরের বাবা মাকে বার বার জানানো হলেও তারা প্রতিকার না করে উল্টো বাদীর পরিবারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। পরে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করে পুলিশ।