বগুড়ার কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা বন্ধের নির্দেশ ছিল জেলা প্রশাসনের। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেলা চালাচ্ছেন আয়োজকরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেলাতে গিয়ে তা এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন। ঘোষণা দিয়ে মেলার স্থান ত্যাগ করার পরপরই ফের শুরু হয় মেলার কার্যক্রম।
বগুড়ায় প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ মেলা, যা চলছে প্রায় ১৫০ বছর ধরে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বড় বড় মাছ আর পাঁচ থেকে ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি। এছাড়া পান-চুন থেকে শুরু করে নাকফুলও পাওয়া যায় এই মেলায়।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ এলাকায় একদিনের জন্য আয়োজন করা হয় এ মেলার।
অন্তত ১৫০ বছরের পুরোনো এ মেলায় রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাছ, মিষ্টি, আসবাবপত্র, প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি কাচের চুড়িসহ নানা পণ্যের দোকান। প্রাচীন এ মেলার আরেকটি বৈশিষ্ট হলো মেলার পরদিন গ্রামে আসা মেয়ে-জামাই, ছেলে আর বউদের নিয়ে বসে বউমেলা।
মেলা কর্তৃপক্ষের হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার মণের বেশি শুধু মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এবার বাগাড় মাছ না থাকায় বিভিন্ন মাছের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ ছিল অনেক। আর এবারও প্রায় ৩০ হাজার মণের বেশি মাছ বিক্রি হয়েছে।
মেলা কর্তৃপক্ষের দাবি, মিষ্টিসহ অন্যান্য দ্রবাদি বিক্রি হয়েছে অন্তত ১৩ কোটি টাকার।
মেলায় আসা মহিষাবান এলাকার মো. ইসমাইল হোসেন (৪৫) বলেন, ছোটবেলা থেকে প্রতিবছর এ মেলা দেখছি। তবে করোনার কারণে সরকার অনুমতি না দিলেও এলাকার মানুষের প্রাণের এ মেলা বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন।
এ বিষয়ে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রওনক জাহান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লিখিত কোনো অনুমতি দেয়নি। এছাড়াও মেলা কমিটি আবেদন করেও কোনো অনুমতি পায়নি।’
এদিকে মেলা চলাকালীন দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাউদ্দিন আহমদ এক ঘণ্টার মধ্যে মালামালসহ দোকান বন্ধ করতে মাইকে প্রচার চালানোর কিছুক্ষণ পরে আবারও জমজমাট হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
সরকারের নানা বাধার পরেও মেলায় মাছ, মিষ্টির পাশাপাশি কাঠ ও স্টিল ফার্নিচার, কৃষিসামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। আর বিনোদনমূলক সার্কাস, কার খেলা, জাদু ও নাগোরদোলাসহ মেয়েদের নানা গয়নার দোকান ছিল।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই মেলা চলেছে। তবে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সতর্ক ছিল।’ মেলায় কিংবা এর আশপাশে কোনো ধরনের অশ্লীল নাচ-গান আর জুয়ার আসর বসানোর চেষ্টা করা হলে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।