নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে আবারও সরব রাজনৈতিক অঙ্গন। সার্চ কমিটির কাছে নাম পাঠাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলো। আজ বৃহস্পতিবার নাম পাঠাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের শরিকরা আনুষ্ঠানিক নাম না দিলেও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলছে তারা সবসময় দেশের স্বার্থে ইতিবাচক। তাই নাম পাঠাবে দলটি।
১৪ দলের শরিকরাও নাম পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। সেইসঙ্গে বাম রাজনৈতিক দলের একটি অংশ নাম পাঠাতে সম্মত না হলেও আরেকটি অংশ বলছে তারা নাম পাঠানোর বিষয়ে অবস্থান ইতিবাচক। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে নাম পাঠাবে ইসি গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির কাছে। বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নাম চূড়ান্ত করতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে শেখ হাসিনার হাতে সার্চ কমিটির নামের তালিকা তুলে দেন সদস্যরা। বুধবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। আজ দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদের সরবরাহ করা ই-মেইলে নাম পাঠানো হবে।
সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইসি গঠনে আড়াই শতাধিক নামের তালিকা জমা পড়েছে। অনেকেই অনলাইনে নাম পাঠাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সচিবালয়ের গেটে সরাসরি এসে খামে করে নামের প্রস্তাব জমা দিচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি যেকোনো ব্যক্তি নাম প্রস্তাব করে পাঠাতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন সাবেক তিন আমলা। তারা হলেন- মোহাম্মদ শফিউল আলম, মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ও ড. মোহাম্মদ সাদিক। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রায় ৪০ জনের নাম প্রস্তাব হয় আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে। প্রস্তাবিত নাম থেকে ক্লিন ইমেজের ১০টি নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে শিক্ষাবিদ, আমলা ও বিশিষ্টজনরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি শক্তিশালী ইসি গঠন করা। এজন্য দলের পক্ষ থেকে আমরা সব সময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এরই ধারাবাহিকতায় সার্চ কমিটির কাছে ইসি গঠনে নামের তালিকা পাঠানো হবে।
সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত যারাই নতুন ইসিতে আসবেন তাদের প্রত্যেকেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হবেন।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে সার্চ কমিটিতে কোন নাম দেওয়া হবে না। ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকে সংলাপেও অংশ নেয়নি দলটি। নাম পাঠানো ইস্যুতে বিএনপির পথেই হাঁটছে শরিক দলগুলোও।
নতুন ইসি নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ জনগণ ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা স্পষ্ট যে, এই অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তাদের লক্ষ্য থাকবে বিদায়ী কমিশনের মতোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। এটা জনগণের সঙ্গে আরেকটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের তামাশা জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
২০-দলীয় জোটের শরিকদের অনেকেই ইতোমধ্যে জানিয়েছে তারা সার্স কমিটির কাছে নাম দেবে না। ১৪ দলের শরিকরা আলাদা আলাদা নাম পাঠাচ্ছে সার্চ কমিটির কাছে। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), গণতন্ত্রী পার্টি, জাসদ (আম্বিয়া), জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টিসহ সব দলই বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সার্চ কমিটির কাছে নাম পাঠাতে পারে। এর বাইরে ইসির নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোও নাম পাঠাতে একমত।
এদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিও নাম দিতে প্রস্তুত। এজন্য গতকাল বুধবার রাতে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বুধবার রাতেই ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তা মেইলে পাঠানো হবে। করোনার কারণে এ ব্যাপারে হয়তো বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা করে মতামত নেওয়া হয়নি।
তবে বাম গণতান্ত্রিক জোট, কমিউনিস্ট পার্টি সার্চ কমিটির কাছে নাম না পাঠালেও নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কমবেশি আলোচনা করছে তারা। বিকল্পধারার পক্ষ থেকে নামের তালিকা পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে।
সার্চ কমিটির মঙ্গলবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ১০ জন করে নামের তালিকা পাঠাতে পারবে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে দলগুলোর পক্ষ থেকে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম পাঠাতে হবে সার্চ কমিটির কাছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে দলগুলোর কাছে সরবরাহকৃত ই-মেইলে নামের তালিকা পাঠানো যাবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকে বসবে না সার্চ কমিটি।
মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে বলেন, ইসি গঠনে কীভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা যায়, সে বিষয়ে মতামত নিতে ৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দেওয়া হবে। এ জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আগামী শনিবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা, দ্বিতীয় বৈঠক হবে পৌনে একটা থেকে সোয়া দুইটা পর্যন্ত।
রোববার বিকাল চারটায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কারা রয়েছেন এ তালিকা প্রকাশ করেনি সার্চ কমিটি। ইতোমধ্যে কমিটির কাছে ৩০ জনের নামের তালিকা এসেছে।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন পাসের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে দেন। পরদিন কমিটির প্রথম সভার পর সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের কাছে নামের প্রস্তাব চাওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নামের তালিকা ও জীবনবৃত্তান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।
আইন অনুযায়ী, এই সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনের জন্য যোগ্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সেই নাম থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন। সেই ইসির ওপরই থাকবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার।