logo
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:১৭
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আজ
দুই প্যানেলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
রুবেল খান, চট্টগ্রাম 

দুই প্যানেলের মধ্যে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

আজ ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। অতীতের ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্য রক্ষা করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এই সংগঠনের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আইনজীবীদের এই সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।


নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরবর্তী এক বছরের জন্য নতুন কমিটিতে ১৯টি পদে কারা পড়বেন বিজয়ের মালা তা জানা যাবে আজই।


গত বছর সভাপতি পদসহ ছয়টি পদ পেয়েছিল বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। আর সাধারণ সম্পাদক পদসহ ১৩টি পদ পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবী এএইচএম জিয়াউদ্দিন। এবার সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন না বিএনপিপন্থি আইনজীবী এনামুল হক। তার পরিবর্তে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে এবার সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন নাজিমউদ্দিন। তিনি এর আগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবারো আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন আবু মোহাম্মদ হাশেম। গতবার তিনি মাত্র ২৮৬ ভোটে বিএনপিপন্থি আইনজীবী এনামুল হকের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এনামুল হক পেয়েছিলেন ১ হাজার ৮৩৫ ভোট আর আবু মো. হাশেম পেয়েছিলেন এক হাজার ৫৪৯ ভোট।


গতবারের মতো এবারো আইনজীবীদের এই নির্বাচনে সভাপতি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। জয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবু মোহাম্মদ হাশেম বলেন, ‘আমরা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি রোধসহ নানা সমস্যা সমাধানের বিষয় নিয়ে প্রচার চালিয়েছি। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পেয়েছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’


বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘আমি এর আগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। চট্টগ্রামের আইনজীবীরা আমাকে পছন্দ করেন। এই আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করার জন্যই আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি আমিই জয়ী হব।’ নির্বাচনে জয়লাভ করলে কোর্ট হিল নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আইনজীবীদের যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তা নিরসনের উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি জানান।


এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এবার তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার আভাস মিলেছে। এই পদে গতবারের মতো এবারো তিন প্রার্থীর মধ্যে জমজমাট ভোটের লড়াই হবে। গতবার আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে এএইচএম জিয়াউদ্দিন ১ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী সমমনা আইনজীবী সংসদের প্রার্থী তৌহিদুল মুনির চৌধুরী টিপু পেয়েছিলেন ৭২০ ভোট এবং বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পেয়েছিলেন ৭১৮ ভোট। এবারো আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে এএইচএম জিয়াউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। এবারসহ এই পদে তিনি তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন। এরমধ্যে দু’বার তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার জয় পেলে তার হ্যাটট্রিক বিজয় সুনিশ্চিত হবে। তবে এবার তার বিজয়ের পথে বড় বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিশোর কুমার। এবার আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিশোর। কিন্তু প্যানেলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।


গতবারের তিন প্রার্থীর মধ্যে এবার এএইচএম জিয়াউদ্দিন ছাড়া বাকি দু’জন এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি। এরমধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে এবার প্রার্থী হয়েছেন আবদুস সাত্তার সরওয়ার এবং সমমনা আইনজীবী সংসদের প্রার্থী তৌহিদুল মুনির চৌধুরী টিপু এবার নির্বাচন করছেন না। যা আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এএইচএম জিয়াউদ্দিনের জন্য সুখবর। কারণ সমমনা আইনজীবী সংসদের প্রার্থী না থাকায় এবার এই প্যানেলের অধিকাংশ ভোট পাবেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এএইচএম জিয়াউদ্দিন। এ কারণে নিজের হ্যাটট্রিক বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এএইচএম জিয়াউদ্দিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ এবারো জয়লাভ করে আমি হ্যাটট্রিক বিজয় অর্জন করব। বিজয়ী হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করব এবং কোর্ট হিল নিয়ে হাইকোর্টে রিট করব। এ ছাড়াও আইনজীবীদের সকল সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাব।


নির্বাচন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে ১৯ পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩৯ জন আইনজীবী প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামীলীগ সমর্থিত সমন্বয় পরিষদের প্যানেল থেকে ১৯ প্রার্থী ও বিএনপি সমর্থিত ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে ১৯ প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র পদে একজন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।


আওয়ামীলীগ সমর্থিত সমন্বয় পরিষদের প্যানেলে যারা নির্বাচন করছেন তারা হলেন সভাপতি পদে আবু মোহাম্মদ হাশেম, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী, সহসভাপতি পদে মো. আজিজ উদ্দিন হায়দার, সাধারণ সম্পাদক পদে এএইচএম জিয়াউদ্দিন, সহসম্পাদক পদে মো. ওমর ফারুক শিবলী, অর্থসম্পাদক পদে এম সালাহউদ্দিন মনসুর চৌধুরী রিমু, পাঠাগার সম্পাদক পদে মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে তানজিলা মান্নান যুথী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. মেজবাহ উদ্দিন দোয়েল।


বিএনপি সমর্থিত ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে যারা নির্বাচন করছেন, তারা হলেন সভাপতি পদে নাজিমউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি পদে শফিক উল্লাহ, সহসভাপতি পদে কামরুল হাসান নাজিম, সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুস সাত্তার সরওয়ার, সহসাধারণ সম্পাদক পদে এরশাদুর রহমান, অর্থসম্পাদক পদে কাজী মো. আশরাফুল হক চৌধুরী, পাঠাগার সম্পাদক পদে আহমদ কবির, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে লাইলা নুর, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে অলি আহমদ। এই দুই প্যানেল থেকে যারা সদস্য পদে নির্বাচন করছেন তারা হলেন মো. নাজমুল আকবর মাশুক, এএনএম রুকনুজ্জামান মুন্না, বিলকিস আরা মিতু, মো. আব্দল্লাহ আল মামুন, মো. ফরিদুল আলম, আইনুল কামাল, মো. খোরশেদ কামাল, মো. মোস্তফা করিম, মো. সাদ্দাম হোসেন, মো. তৌহিদুল বারি চৌধুরী, মিনহাজ উদ্দিন, মো. সাদ্দাম হোসেন আজাদ, মনজুর আলম, রানা মিত্র, সাজেদা বেগম সাজু, সেলিনা আক্তার, শ্যামল চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম ও জিয়াবুল আলম।


এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর ১০ ফেব্রæয়ারি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারো হচ্ছে। নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এবারের নির্বাচনে প্রায় পাঁচ হাজার আইনজীবী ভোট দেবেন।