logo
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৯
এক পরিবারে তিনজনের ক্যানসার
চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব, ঠাঁই মিলল আমবাগানে
আহমেদ সোহান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ



চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব, ঠাঁই মিলল আমবাগানে

সুকচাঁন আলীর পরিবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার বড়চক দৌলতপুরের বাসিন্দা সুকচাঁন আলী। ১৩ বছর আগে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে সন্তান সামিউল। কিন্তু পাঁচ বছর না যেতেই ক্যানসার ধরে পড়ে তার।

নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়েও নিজের প্রথম সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি সুকচাঁন আলী। সামিউলের মৃত্যুর পরে সুকচাঁন আলীর ঘরে জন্ম নেয় আরো দুই সন্তান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাদেরও ধরা পড়ে ক্যানসার। পরিবারে আগত সব সন্তানের ক্যানসারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সুকচাঁন আলী। সবশেষ নিজের ভিটাবাড়ি বিক্রি করে অন্যের আমবাগানে ঠাঁই মিলেছে তার।

সুকচাঁন আলী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত কর্মহীন। কাঁধে ছিল পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানোর দায়িত্ব। কিন্তু একে একে তিন ছেলের ক্যানসারের খরচ চালতে গিয়ে জায়গাজমি বিক্রি করে এখন দিশেহারা আমি। প্রথম ছেলে সামিউলকে বাঁচাতে পারিনি। পরে আলিউল নামে আরও এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের কিছুদিন যেতে তারও ক্যানসার ধরা পড়ে। অনেক কষ্টে তাকে চিকিৎসা করে ভালো করে তুলেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আড়াই বছর আগে আরেক সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম শাহিদ। সম্প্রতি তারও ক্যানসার ধরা পড়েছে। এখন চিকিৎসকরা বলছেন- তার দুটি চোখ উঠাতে হবে। এতে খরচ হবে প্রায় দুই লাখ টাকা। কিন্তু আমি কোথায় পাব এত টাকা? এখন চিকিৎসার অভাবে প্রায় প্রাণ হারাতে বসেছে আমার শাহিদ। আশপাশের মানুষের সহযোগিতা নিয়েও সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে শেষ সম্বল ভিটে মাটিটুকু বিক্রি করেছি। এখন অন্যের জায়গায় আমবাগানে ঠাঁই নিয়েছি।’

সুকচাঁনের স্ত্রী রীমা বেগম বলেন, ‘আমি এক সন্তানকে হারিয়েছি। এখন ফুটফুটে উজ্জ্বল চেহারার আড়াই বছরের ছোট সন্তানটিরও দুই চোখেই ধরা পড়েছে ক্যানসার। দ্রুত চোখ তুলে না ফেললে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। এখন আমি কি করব, কোথায় যাব এই ভেবে দিশেহারা হয়ে গেছি।’

সুকচাঁনের প্রতিবেশী দুলাল আলী বলেন, ‘তার প্রথম শিশুটি মারা গেছে। আর দ্বিতীয়টাকে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে ভালো করেছে। কিন্তু এখন তৃতীয় শিশু শাহিদও ক্যানসারে আক্রান্ত। এখন তাকে ভালো করবে কি করে। তাই ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে।’
শিবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন আলী বলেন, ‘সুকচাঁন আলী আসলেই একজন অসহায় ব্যক্তি। এর আগে সামান্য কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে চিকিৎসার ব্যয়বহুল খরচ হওয়ায় পৌরসভার পক্ষ থেকে তা বহন করা সম্ভব নয়। তবে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে একটি তাজা প্রাণ বেঁচে যেত।’

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, সম্প্রতি সুকচাঁন আলীর দুই সন্তানকে শিবগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি ও শিক্ষা ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ, ফেইজ ২-এর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরে তাদের প্রয়োজনীয়তা ও যথার্থতার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, খবর পাওয়ায় সুকচাঁনের বাড়িতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছি। এ ছাড়া ভূমিহীন সুকচাঁন আলীকে দ্রুত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে সেমিপাকা ঘর দেওয়া হবে।