logo
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:৩৬
শাবিতে কাল যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী, প্রক্টরকে অব্যাহতি
কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট

শাবিতে কাল যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী, প্রক্টরকে অব্যাহতি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ছবি: সংগ্রহীত

আগামীকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত এক মাস ধরেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ শান্ত করার মিশন নিয়ে ক্যাম্পাসে আসছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র তার আগমণের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রীর একান্ত সচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদও একটি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানানো হয়, শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সিলেটে পৌঁছে তিনি ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

গত ১৩ জানুয়ারি ছাত্রী হলে দাবি আদায়ের আন্দোলনে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর হামলা, পুলিশের গুলি এবং পরিস্থিতি সামলাতে না পারায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। টানা এই অনশন ভাঙালে সম্ভব হলেও আবারও ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন। এমন উত্তাল পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেই শুক্রবার ক্যাম্পাসে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব শিক্ষামন্ত্রী আসার কথা গণমাধ্যমকে জানান। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘শিক্ষার্থীদের অনুরোধে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শাবিপ্রবিতে আসছেন। জাফর ইকবাল স্যার (অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিস্তারিত কর্মসূচি এখনও ঠিক হয়নি। আমরা আলোচনা করে সার্বিক বিষযে জানাবো।’

তার দাবির পর বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া যায়।

এদিকে, শাবিতে প্রশাসনিক দায়িত্বে এরইমধ্যে রদবদল শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আলমগীর কবিরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইল। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
অফিস আদেশে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীরকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে প্রক্টর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আজ বিকেল পাঁচটায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং বন্ধ করে দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবিতে আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গোল চত্বর’ থেকে মিছিল বের করেন তারা।

শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘গত ২৬ জানুয়ারি আমাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার কোনোরকম দৃশ্যমান প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের ওপর করা দুটি মিথ্যা মামলা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বর, বিকাশ, নগদ একাউন্টসহ অনলাইনে লেনদেনের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর এক-দুটি বাদে সেসবের প্রায় সবগুলোই এখনো বন্ধ আছে। আমাদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, আমাদের দাবিগুলোও এখনো পূরণ হয়নি।’

এসময় তাদের হাতে ‘দৌড়া, চাটুকার দৌড়া’; ‘ফরিদ হটাও, শাবি বাঁচাও’; ‘১,২,৩,৪, ফরিদ তুই গদি ছাড়’; ‘পালা, চাটুকার পালা’; ইত্যাদি লেখা এবং ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া পুলিশি হামলার বিভিন্ন ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

মিছিল শেষে গত ১৬ জানুয়ারি শাবিপ্রবির আইআইসিটি ভবন সম্মুখে যেখানে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, সেখানে রক্তিম হস্তছাপ এঁকে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাভবন ‘ডি’ এর গ্রাউন্ডে একটি সাধারণ সভা করেন তারা।

শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ বা অপসারণের আগ পর্যন্ত এভাবেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন চলবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। পরে ১৬ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ অবরুদ্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের নানা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

আরো পড়ুন:

ফের স্লোগানে উত্তাল শাবিপ্রবি