logo
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:০৭
জেলে যেতেই হচ্ছে হাজী সেলিমকে
এম বদি-উজ-জামান 

জেলে যেতেই হচ্ছে
হাজী সেলিমকে

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখা-সংবলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিননামা বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের ফলে হাজী সেলিম এমপিকে কারাগারে যেতেই হচ্ছে।


আইনানুযায়ী, হাজী সেলিমকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। আর এ আপিল করতে হলে আগে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে। নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করার সুযোগ না থাকায় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে যেতে হবে। এরপর কারাগার থেকে আপিল বিভাগে আপিল আবেদন দাখিল করতে হবে। এরপর আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করার সুযোগ পাবেন হাজী সেলিম।


হাইকোর্টের এ রায়ের পর হাজী সেলিম সংসদ সদস্যপদে বহাল থাকবেন কিনাÑ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কোনো আদালতে যদি কমপক্ষে দুই বছরের সাজা হয়, তবে কেউ সংসদ সদস্যপদে বহাল থাকতে পারেন না। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে যদি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য আপিল করেন, আর রায় যদি স্থগিত করা হয় তবে সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকে বলে জানান আইন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে ক’জন সংসদ সদস্যের সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এর সবগুলো ক্ষেত্রেই আপিল বিভাগে চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারো সংসদ সদস্য পদ যায়নি। তবে শুধু বিদেশি আদালতে সাজা হবার কুয়েতের কারাগারে বন্দি ল²ীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।


এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ভোরের আকাশকে বলেছেন, সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুযায়ী এ রায়ের পর হাজী সেলিমের সংসদ সদস্যপদ থাকবে না। তিনি বলেন, তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে তাকে কারাগারে যেতে হবে।


তবে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ভোরের আকাশকে বলেন, হাইকোর্টের এ রায়ের লিখিত কপি পাবার পর শিগগিরই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। এর আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করা হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে হাজী সেলিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। এরপর রিভিউ আবেদন করারও সুয়োগ রয়েছে। সুতরাং এ রায়ই চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি নয়। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তির পরই সংসদ সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এর আগ পর্যন্ত সংসদ সদস্যপদে থাকতে বাধা নেই।


সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হাইবার বা সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত জন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে’।


বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছর ৯ মার্চ হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দেন। গতকাল এর পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। দুদকের করা মামলায় তাকে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚তভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর ও দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপন করার দায়ে ৩ বছরের কারাদÐ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এর মধ্যে শুধু জ্ঞাত আয়বহিভর্‚তভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আর সম্পদের তথ্য গোপন করার দায়ে দেওয়া ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ে হাজী সেলিমের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুক‚লে বাজেয়াপ্তের আদেশ বহাল রাখা হয়েছে।


অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল এক রায়ে দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপন করার দায়ে তিন বছর এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় সাজা একটির পর একটি কার্যকরের আদেশ থাকায় তার মোট ১৩ বছরের (১০ বছর ও ৩ বছর) কারাদণ্ড হয়। একইসঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিামানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে হাজী সেলিমের সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে দুদক। আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি এক আদেশে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন এবং পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন। কিন্তু গত প্রায় ৬ বছরেও কোনো পক্ষই এ আপিলের ওপর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি। সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই হাজী সেলিমের মামলার বিষয়ে দুদকের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় হাজী সেলিমের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয় দুদক।