logo
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:৫৭
সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ১৩ নির্দেশনা
আহসান সুমন, কক্সবাজার

সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ১৩ নির্দেশনা

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্ম পরিকল্পনাসহ ১৩টি সুপারিশ বাস্তাবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি ছাড়া দ্বীপে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ না করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অর্ধশত সম্ভাব্য সুপারিশের মধ্য থেকে এসব সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়।

সুপারিশগুলো হলো- সেন্টমার্টিনে সব ধরনের অবকাঠামো ও সম্প্রসারণ বন্ধ থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া সেন্টমার্টিনে স্থানীয়দের ইকোলজিক্যালি বসতঘর ও হাসপাতাল ছাড়া কোনো অবকাঠামো করা যাবে না, পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা, শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধ, জোনিং ও সংরক্ষিত এলাকা নির্মাণ, হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউস, যান চলাচল ব্যবস্থাপনা, ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ ও কেয়ারি বেষ্টনী বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, জমি ব্যবহার নীতিমালা, জেটি ব্যবস্থাপনা, পর্যটক জাহাজ পরিবহন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা।

এসব সুপারিশে বিস্তারিত উল্লেখ করে বাস্তবায়নে অধীনস্থ সংস্থাদের নিজ নিজ দায়িত্ব দ্রুত পালনের নির্দেশ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।

এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সেন্টমার্টিন রক্ষার্থে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দ্বীপ রক্ষায় ১৩টি সম্ভাব্য সুপারিশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থাকে কঠোর নির্দেশ পালনে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এতে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ।

সভায় জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম. এম. রকীব উর রাজা, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম ও খোরশিদ আলম বক্তব্য রাখেন।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় নতুন হোটেল ও অবকাঠামো বন্ধসহ নির্দেশনাগুলো চূড়ান্তকরণে গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মহাপরিচালক-২ (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত ১৩টি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে নির্দেশ দেয়া হয়।

এই নির্দেশনা পেয়ে সুপারিশ বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), জেলা পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, মৎস অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা পরিষদসহ সকল সংস্থা কাজ শুরু করছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সেন্টমার্টিনবাসী সবধরনের সহযোগিতা করবে। স্থানীয়দের আয়-রোজগারের বিষয়টিও মাথায় রাখা জরুরি। এখানে নতুন করে ভবন না হোক আমরাও চাই। কারণ দ্বীপ না বাঁচলে এখানকার বাসিন্দারা থাকবে কোথায় ?’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নে কাজ চলছে। বিশেষ করে এখানে যাতে কেউ নতুন করে কোনো ভবন নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিভিন্ন ভৌগলিক কারণে এ দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে দ্বীপটি এখন ঝুঁকিতে। সরকার চায় দ্রুত সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে। সেই লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সূত্র ধরে, সেন্টমার্টিনে সরেজমিনে সুপারিশ বাস্তবায়নে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’

তা ছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা আছে, সেটি বাস্তবায়নেরও কার্যক্রম চলছে বলে জানান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।