logo
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৮
উপাচার্য ফরিদ ইস্যু রাষ্ট্রপতিকে জানাব : শিক্ষামন্ত্রী
কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট

উপাচার্য ফরিদ ইস্যু রাষ্ট্রপতিকে জানাব : শিক্ষামন্ত্রী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণে শিক্ষার্থীদের দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিই উপাচার্যের নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন। এ কারণে শাবি উপাচার্যের অপসারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সব বক্তব্য রাষ্ট্রপতির কাছেই তুলে ধরব।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী এই কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিও দ্রুত স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে সন্ধ্যায় মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে সার্কিট হাউস থেকে রওনা দেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল ইসলাম নওফেল।

এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মিছিল করেছে শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মুক্তমঞ্চে মিলিত হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ২০ মিনিট পরেই তিনি প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করেন। সেখানে শাবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিরাপত্তা কর্মীদের বেষ্টনীতে প্রবেশ করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী রাত ৮টার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হতে শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রওনা হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যদের প্রতিনিধিদল। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণসহ নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টায় সিলেট সার্কিট হাউসে বৈঠক শুরু হয়।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলে ছিলেন মুহাইমিনুল বাশার রাজ, ইয়াসির সরকার, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, আশিক হোসাইন মারুফ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, সুদীপ্ত ভাস্কর, শাহরিয়ার আবেদিন, আমেনা বেগম, মীর রানা ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।

ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখপাত্র মুহাইমিনুল বাশার রাজ জানিয়েছিলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ, তাকে সরিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার, আর্থিক লেনদেনের অ্যাকাউন্ট চালু, পুলিশি হামলায় গুরুতর আহত সজল কুণ্ডুকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান ও নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিতকরণ নিয়ে কথা বলা হবে।
এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো-ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া, সারা বছর (৩৬৫ দিন) আবাসিক হল খোলা রাখার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা। এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জের পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ।

ওই রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশনও শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারো প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।

গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন।