logo
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৪৮
ইউক্রেন ইস্যুতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে পশ্চিমারা : রাশিয়া

ইউক্রেন ইস্যুতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে পশ্চিমারা : রাশিয়া

পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের সংবাদ মাধ্যম নিজেদের আক্রমণাত্মক আচারণ থেকে মনোযোগ সরানোর জন ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়াকে জড়িয়ে ব্যাপক আকারে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেন ইস্যুতে শনিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য টেলিফোন সংলাপের কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতি এসেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অতি আসন্ন বলে যুক্তরাষ্ট্র একটি কঠোর সতর্কতা জারি করেছে।

গতকাল সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়াতে দেশটির তিনদিকে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জামাদি জড়ো করার প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানির প্রকাশিত নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে। ছবিতে দেখা যায় ক্রিমিয়া, পশ্চিম রাশিয়া এবং বেলারুশ অংশে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে এবং ধারনা করা হচ্ছে, এই সামরিক উপস্থিতি ক্রেমলিনের ইউক্রেন হামলার পরিকল্পনারই অংশ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই গণমাধ্যমটি।

‘২০২১ সালের শেষের দিকে এবং ২০২২ এর শুরুতে, বৈশ্বিক তথ্য ভাণ্ডার একটি অভূতপূর্ব মিডিয়া প্রচারণার সাক্ষী হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বোঝানো যে রাশিয়ান ফেডারেশন ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেন।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান শুক্রবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ইউক্রেনের ওপর রুশ হামলা শিগগিরই শুরু হতে পারে। এই হামলায় বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে। সুলিভান ইউক্রেনে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশটি ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

যদিও সুলিভান বলছেন যে, পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। সিএনএন বৃহস্পতিবার স্যাটেলাইটের ছবির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ক্রিমিয়াতে বিশাল আকারের সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে রাশিয়া। এই সৈন্য ও সরঞ্জাম ক্রিমিয়ান রাজধানী সিমফেরোপলের উত্তর-পূর্বে অব্যবহৃত ওকটিয়াব্রস্কয় এয়ারফিল্ডে জড়ো করা হয়েছে।

ম্যাকসারের মতে, এই সামরিক ঘাঁটিতে ৫৫০টির বেশি তাঁবু এবং শত শত যানবাহন অবস্থান করছে। ক্রিমিয়ার অন্যান্য স্থানগুলোতেও সৈন্য ও সরঞ্জামের আগমন দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে নভোজারনয়ে। ওই সামরিক খুঁটিগুলোতে ব্যাপক আর্টিলারি মোতায়েন এবং সামরিক প্রশিক্ষণের অনুশীলন করতে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই সতর্কবার্তার মধ্যে শনিবার বাইডেন ও পুতিন কথা বলবেন। ক্রেমলিন দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে বলছে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো সমর্থন, অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক প্রশিক্ষণ বরং রাশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে ক্রমবর্ধমান হুমকি তৈরি করেছে।

অন্যদিকে শুক্রবার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ইউক্রেন সীমান্তে নতুন রাশিয়ান সৈন্য আসায় ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা খুব উদ্বেগজনক অবস্থায় দেখা গেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়া ১ লাখ ও বেশি সৈন্য সমাগম ঘটিয়েছে এবং এই সপ্তাহে নতুন করে হাজার হাজার সৈন্য যোগ দিয়েছে।

স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রিমিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূল স্লøাভন শহরের কাছে প্রথমবারের মতো সাঁজোয়া যান মোতায়ন করা হয়েছে। ক্রিমিয়ায় নতুন করে এই সৈন্য মোতায়েনে পরিলক্ষিত হয়েছেÑ এমন এক সময়ে যখন কয়েকটি বৃহৎ উভচর জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজ ক্রিমিয়ার প্রধান বন্দর সেভাস্তোপলে নোঙর করেছে।

ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বেলারুশের গোমেল শহরের কাছে জায়াব্রোভকা এয়ারফিল্ডে ‘সেনা, সামরিক যান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করার তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই এলাকায় এ-ই প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার দেখা গেছে এবং ঘটনাস্থলে একটি ফিল্ড হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এইদিকে শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো ‘সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতিতে’ ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং সামাজিক অবকাঠামোগুলো’ রক্ষার এক নির্দেশনা জারি করেছেন। এক বিবৃতিতে ক্লিটসকো বলেন, ‘আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হল সম্ভাব্য উসকানি প্রতিরোধ করা এবং সামরিক আক্রমণ থেকে এই স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করা।’

সামরিক সৈন্য মোতায়েনের সাম্প্রতিক ভিডিওগুলো একসঙ্গে করলে দেখা যায়, এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান রাশিয়ার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এই স্থানটি প্রায় ২০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত যেখানে বৃহস্পতিবার থেকে রাশিয়া-বেলারুশ যৌথ অনুশীলন শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে পূর্ব ইউক্রেন, কুর্স্ক, রোস্তভ-অন-ডন এবং ব্রায়ানস্ক শহরের আশপাশে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

ক্লিটসকো বলেন, এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ১০ দিনের জন্য জ্বালানির রিজার্ভ তৈরি করা। শহরজুড়ে নাগরিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, ৫০০টিরও বেশি স্টোরেজ সুবিধা এবং প্রায় ৪ হাজার ৫০০টির মতো দুবার- ব্যবহারের কাঠামোগত সুবিধা আছে। ক্লিটসকো আরো বলেন, রাজধানী থেকে জেলা পর্যায়ে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে একটি টেলিফোন সংলাপে বলেন ‘সম্ভাব্য রাশিয়ান আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ব্লিঙ্কেন ‘রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা করলে এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত, গুরুতর এবং ঐক্যবদ্ধ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

সিএনএন থেকে অনূদিত