logo
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:০৭
১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে ছাত্র জনমত
নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে ছাত্র জনমত

‘সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং যুবলীগের নেতা-কর্মীদের তৎপরতার মাধ্যমেই নিষেধাজ্ঞা ভাঙা এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ এবং তাদের সহযোগী নেতৃত্ব ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছেন। ২০ ফেব্রæয়ারি রাতে সর্বদলীয় পরিষদের বৈঠকে এবং পরদিন আমতলার সভায় তাদের ভূমিকা থেকেই তা স্পষ্ট’।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিকের লেখা ‘ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ও তাৎপর্য’ বইতে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আগ মুহূর্তের ঘটনাবলি।


বইতে আরো লেখা হয়েছে, ‘প্রসঙ্গত একটি কথা বলা দরকার যে রাজনীতিসচেতন ছাত্রসমাজের চাপে যেমন ১৪৪ ধারা ভাঙার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল, তেমনি জনসাধারণ ও সরকারি কর্মচারীদের একাংশও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন যুগিয়েছেন। এরাই ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২২ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ব্যারাকে অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং কথাটা অপ্রিয় শোনালেও সত্য যে, জানাজায় ছাত্রদের তুলনায় ওরাই ছিলেন সংখ্যায় বেশি।


তা ছাড়া এদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ গণআন্দোলনের পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছিল। কম্যুনিস্ট পার্টির ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত পর্যালোচনামূলক দলিলে পরিবেশিত বক্তব্যেও জনতার অংশগ্রহণের এই দিকটি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এই আন্দোলন যে এত তীব্র ও ব্যাপক আকার ধারণ করিতে পারে তাহা পার্টি নেতৃত্ব বুঝিতে পারে নাই। জনগণের মনে সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড বিক্ষোভ জাগিয়াছিল তাহা পার্টি নেতৃত্ব ছোট করিয়া দেখিয়াছিল। এই কারণে ২০ তারিখ ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পর কি কর্তব্য হইবে এই সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ না দিয়া সেদিন পার্টি নেতৃত্ব কমরেডদের শুধু বলিয়াছিলেন যে, ২১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র জমায়েত করিয়া সেখানে পরবর্তী কর্মপন্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক এবং কমরেডরা যেন সেই সিদ্ধান্ত মানিয়া নেন’।


ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্বের দাবিদার হতে চান অনেকেই। তাই এ প্রসঙ্গে বইতে লেখা হয়েছে, ‘অবস্থার মূল্যায়নে এধরনের আত্মসমালোচনামূলক বক্তব্য কাজে লাগিয়ে কোনো কোনো লেখক গণআন্দোলনের কৃতিত্ব আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের পক্ষে টেনে নিতে চেষ্টা করেছেন, যে গৌরব একান্তভাবেই সাধারণ ছাত্রসমাজের এবং জনসাধারণের প্রাপ্য, যারা তৎকালীন সরকারি রক্তচক্ষু ও নির্যাতন উপেক্ষা করে নির্ভয়ে আন্দোলনে গতিসঞ্চার করেছেন। আর সংগঠনগতভাবে সর্বদলীয় পরিষদ নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ, যুবলীগ এবং কয়েকটি ছাত্রাবাস লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে’।


বলা হয়, ‘২০ ফেব্রুয়ারি রাতে সর্বদলীয় পরিষদের বৈঠক কখন শেষ হয় তা নিয়েও যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ গভীর রাতে বৈঠক শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। মোহাম্মদ সুলতানের মতে রাত আটটা পর্যন্ত বৈঠক চলেছে। অন্যদিকে আবদুল মতিনের হিসাব মতে বৈঠক রাত ১১টার দিকে শেষ হয়ে যায়। এরপর অলি আহাদ ও আবদুল মতিন একসঙ্গে বেরিয়ে আসেন এবং অলি আহাদ চলে যান তার গ্রæপের ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করতে, আর আবদুল মতিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসের দিকে’।


২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বইতে আরো বলা হয়েছে, ‘কথাটা আমরা আগেই বলেছি যে বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের এবং যুবলীগের নেতা ও কর্মীদের তৎপরতার মাধ্যমে ২১ ফেব্রæয়ারির ছাত্রসভা এবং ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য ব্যবস্থাদি ২০ তারিখ রাতেই নেয়া হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রাবাসেই ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য তৈরি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে তাদের উদ্দীপ্ত করার কোনো প্রয়োজন ছিল না, প্রয়োজন ছিল যোগাযোগ। সে কাজ ঐ রাতেই সম্পন্ন হয়েছিল। তাই দেখা যায়, পরদিনের ছাত্র জমায়েত মোটেই আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়।


এ প্রসঙ্গে অলি আহাদ বলেছেন যে, তিনি সর্বদলীয় পরিষদের বৈঠক থেকে ফিরে যুবলীগ অফিসে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক অনাবাসিক যুবলীগ কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরদিন আমতলার সভায় ছাত্রদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব ভাগ করে দেন’।