রাউন্ড রবিন লিগের খেলা শেষ। লড়াই এবার চার দলের। দুটি দল উঠবে ফাইনালে। শিরোপার হাসি হাসবে একটি দল। দেখতে দেখতে বিপিএল এখন শেষের পথে। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে প্লে অফ রাউন্ড। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে এলিমিনেটর রাউন্ডে মুখোমুখি হবে খুলনা টাইগার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল।
বিপিএলে রাউন্ড রবিন লিগ শেষে দুর্দান্ত রূপে ছিল সাকিবের বরিশাল। ১০ ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে তারা। হার মাত্র দুটি। বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি এক ম্যাচে। সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় শীর্ষে তারা। দ্বিতীয় স্থানে সাবেক চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১০ ম্যাচে দলটির পয়েন্ট ১৩। ছয় ম্যাচে জয় ও তিনটিতে হার। এক ম্যাচ পয়েন্ট ভাগাভাগি। শীর্ষে থাকা এই দুই দল আজ লড়বে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে। জয়ী দল চলে যাবে ফাইনালে। হেরে যাওয়া দলেরও সুযোগ থাকবে ফাইনালে যাওয়ার। সুযোগ পাবে আরও একটি ম্যাচ খেলার। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে এই দল খেলবে এলিমিনেটর ম্যাচে জয়ী দলের সঙ্গে।
সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফ রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত করেছে খুলনা টাইগার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দুই দলেরই ১০ ম্যাচে জয় ও হার ৫টি করে। এই দুই দল আজ লড়বে এলিমিনেটর ম্যাচে। জয়ী দল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলবে ফাইনালে উঠতে।
বিপিএলের সিলেট পর্বেই প্লে অফ রাউন্ড নিশ্চিত করে বরিশাল ও কুমিল্লা। তবে বাকি দুটি দলের প্লে অফ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াটা ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। বিশেষ করে কুমিল্লাকে হারিয়ে খুলনার শেষ চারে উঠে আসার গল্পটা বেশ চমকজাগানিয়া। আগের ম্যাচেই কুমিল্লার কাছে হেরেছিল খুলনা। শেষ ম্যাচটি ছিল খুলনার জন্য মরণপণ। হারলেই বিদায়। এমন সমীকরণের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে খুলনা যা করে দেখায়, তা ছিল সত্যিই অবাক করার মতো। দূরন্ত কুমিল্লাকে খুলনা হারায় ৯ উইকেটে।
অথচ আগে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স করেছিল ৫ উইকেটে ১৮২ রান। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডুপ্লেসিস। জবাবটা খুলনা এমন দাপটের ঢঙে দেবে, তা কল্পনা করেনি কেউ। অনেকে ভেবেছিল খুলনা হারবে, এই সুযোগে ৯ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফ নিশ্চিত করবে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। কিন্তু ঢাকাকে হতাশায় ডুবিয়ে খুলনা জেতে দোর্দণ্ড দাপটে। মজার বিষয় হলো, ১৮৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১৮২ রান করে খুলনা। জয় থেকে এক রান দূরে তখন খুলনা। বিদায় নেন ওপেনার মেহেদী হাসান। মঈন আলীর বলে ক্যাচ দেন ডু প্লেসিসের হাতে। তার আগে করে যান ৪৯ বলে ৭৪ রানের জ¦লজ¦লে ইনিংস। ছয়টি চারের পাশাপাশি চারটি ছক্কা হাঁকান তিনি। সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দেন আন্দ্রে ফ্লেচার। ৬২ বলে তিনি অপরাজিত থাকেন ১০১ রানে। চার ও ছক্কা হাঁকান তিনি সমান ছয়টি করে। ৯ উইকেটের দারুণ এই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসে খুলনা। নিশ্চিত হয় প্লে অফ।
খুলনার প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম। সেই চট্টগ্রামের প্লে অফে আশাটা বেশ রোমাঞ্চের। এই দলটিরও শেষ ম্যাচ ছিল ডু অর ডাইয়ের মতো। প্রতিপক্ষ সেখানে ছিল সিলেট সানরাইজার্স। আগেই বিদায় নেওয়া সিলেট বেশ ভোগায় তারুণ্যনির্ভর চট্টগ্রামকে। আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৮৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে দলটি। কিন্তু সে লক্ষ্য চট্টগ্রাম স্পর্শ করে ৫ বল হাতে রেখে। এই ম্যাচে চট্টগ্রামের হয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন ওপেনার উইল জ্যাকস। ৫৭ বলে তিনি খেলেন ৯২ রানের অবিশ^াস্য ইনিংস। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি করেন ব্যাটিং। ২০তম ওভারের প্রথম বলে দারুণ ছক্কা হাঁকিয়ে চট্টগ্রামকে প্লে অফে নিয়ে যান তিনি।
এলিমিনেটর ম্যাচে তাই বেশ জমবে খুলনা ও চট্টগ্রামের ম্যাচ। অন্যদিকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বরিশাল ও কুমিল্লার ম্যাচও হবে বেশ উপভোগ্য, তা সহজেই অনুমেয়। গোটা বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। তবে প্লে অফ রাউন্ড থেকে দেখা মিলবে তিন-চার হাজার দর্শকের। জমাটি লড়াইয়ের সঙ্গে দর্শকদের উপস্থিতি বাড়তি মাত্রা যোগ করবে প্লে অফ রাউন্ডে।