পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিদায় নিচ্ছেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কশিমন। এই কমিশনের দায়িত্ব পালনের এই সময়কালে ছিল নানান রকমের ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা। তবু দায়িত্ব পালনে নিজেদের সফল মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।
রোববার রাজধানীর সোনারগাঁয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কমিশনকে সফল বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করেছি সম্পুর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য। কারো কথায় না, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। ৫ বছরের মেয়াদে সব নির্বাচনই শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (বাংলা পাঠ) এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১ এর মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের শেষ দিন আজ সোমবার। ইসি থেকে তারা আনুষ্ঠানিক বিদায় নেবেন। গত ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে সার্চ কমিটির বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই নির্বাচন কমিশন। কমিশনের অন্য সদস্য রয়েছেন মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদত হোসেন। এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় নির্বাচন।
এ ছাড়া ৫ বছরের দায়িত্ব পালনে উপজেলা পরিষদ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ যত নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা রকমের সমালোচনা রয়েছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে এই ইসির অধীনে স্থানীয় সব নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সর্বশেষ তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো মহলেই প্রশ্ন ওঠেনি।
এ ছাড়া আর্থিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়ে তদন্তে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়াও ৫ বছরের মেয়াদে ইসিতে বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। এসব অভিযোগ নিয়েই আজ বিদায় নিচ্ছে বর্তমান ইসি।
এদিকে বিদায়ের আগে গত রোববার হোটেল সোনার গাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সিইসি নুরুল হুদা সাংবাদিকদের আরো বলেন, নির্বাচনে একটা পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাতজন। পাস করে একজন। নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা থাকবেই। ভালোমন্দ বলবে। এটা স্বভাবিক, এদেশের কালচার অনুযায়ি স্বাভাবিক। নিজেকে সফল মনে করেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছি।
সবগুলো নির্বাচন শেষ করে দিয়েছি। একটা নির্বাচনও বাকি রাখিনি। পরিপুর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করেছি। সব নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না সব সুষ্ঠু হয়েছে তা নয়। মারামারি হয়েছে, কোথাও ব্যালট ছিনতাই হয়েছে আবার ধরা পড়েছে। নির্বাচন বন্ধ হয়েছে। আবার পুনরায় নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং সবগুলো নির্বাচন পরিপুর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে তা বলা যাবে না। কিছু নির্বাচন তো এমন হয়েছেই। গণমাধ্যমে এসেছে শান্তিপুর্ণ নির্বাচন হচ্ছে, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে। শীতের দিনে রোদের মধ্যে নারী পুরুষ লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছে। ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, ইভিএমে ৭০ শতাংশ ভোট দিচ্ছে। এর চেয়ে সফল নির্বাচন আর কি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ের কথাবার্তা, আর বলব না।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আইন বাংলা করায় তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে। কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কমিশনের পক্ষ থেকে আরপিওর বাংলা পাঠ করা হয়েছে। এমন মাসে এটা করা হয়েছে যখন ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষার মাস। এ কাজটা করতে অনেক দেরি হয়েছে। যারা ভোটার আছেন তারা অনেক উপকৃত হবেন বাংলায় পড়তে পেরে।
সীমানা নির্ধারণ আইন খুব জটিল। তবে যারা রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও মাহবুব তালুকদার শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।