logo
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:০০
আজ পহেলা ফাগুন, আজ ভালোবাসার দিন
এম সাইফুল ইসলাম

আজ পহেলা ফাগুন, আজ ভালোবাসার দিন

‘মন যদি আকাশ হতো তুমি হতে চাঁদ/ভালোবেসে যেতাম শুধু হাতে রেখে হাত। সুখ যদি হৃদয় হতো তুমি হতে হাসি/হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিয়ে বলতাম তোমায় ভালোবাসি’। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা’ দিবস। প্রকৃত ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট সময় বা দিনক্ষণ না থাকলেও এখন ‘ভালোবাসা দিবসে’ যেন বিশেষ রূপে বিশ্বব্যাপী ধরা দেয় ভালোবাসা।

মনের যত বাসনা, অব্যক্ত কথা ডালপালা মেলে ছড়াবে আজ বসন্তের মধুর হাওয়ায়। প্রেম-ভালোবাসায় মাতোয়ারা হওয়ার দিন পহেলা ফাল্গুন। ফাগুনের মাতাল হাওয়ার সঙ্গে আজ ভেসে যাবে প্রেমপিয়াসী তরুণ-তরুণী। ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। তরুণ-তরুণী ছাড়াও সব বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের এমন দিনে ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষের প্রতি মানুষের।

ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশে কিভাবে ‘ভালোবাসা দিবস’ হয়ে উঠল তারও রয়েছে ইতিহাস। ইতিহাস নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও প্রাণের আবেশে ভালোবাসার এই দিনে আবেগ আর অনুভূতির মিশ্রণে বেশিরভাগ মানুষ মেতে উঠেন ভিন্ন আমেজে।

ইতিহাস: ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত হয়। এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইন ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিন্ন মত অনুযায়ী সেইন্ট ভ্যালেনটাইন একজনকে ভালোবেসেছিলেন। চিঠিটি লিখেছিলেন তার কাছেই।
ভ্যালেনটাইনস সর্বজনীন হয়ে উঠে ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি সর্বজনীন হওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবি জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এদিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তাদের নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্ট ধমার্বলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ হল যেভাবে: বাংলাদেশে সর্বপ্রথম তৎকালীন যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক শফিক রহমান ১৯৯৩ সালে ‘ভালোবাসা দিবস’ পালন করেন। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর কাছে ‘ভালোবাসা দিবস’র কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়। এই দিনে, বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, স্ত্রী এবং স্বামী, মা এবং সন্তান, ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড এবং অন্যান্য জিনিস আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো কানায় কানায় পূর্ণ থাকে কপোত-কপোতিতে।

দিনটিকে ঘিরে প্রতিবার ঢাকাসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কমর্সূচির আয়োজন করে। দেশের টেলিভিশনেও এই দিবসটি ঘিরে নানা অনুষ্ঠান হাতে রাখে। তবে বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ চলমান থাকায় এবারোও একটু ব্যতিক্রমভাবে দিনটি কাটাবেন অনেকেই। এবার বড় ধরনের কোন কনসার্ট বা অনুষ্ঠানের সুযোগ নেই। তাই বিশেষ করে দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘোরাঘুরি করেই সময় কাটাবেন অনেকেই। গতকাল রোববার থেকেই রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে ফুলের দোকানে চলছে উচড়ে পড়া ভিড়। করোনার কারণে হতাশা কাটিয়ে পহেলা ফাগুন আর ভালোবাসা দিবসে বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় দোকানিরাও বেশ খুশি। বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে বিধিনিষেধ থাকা সত্বেও টিএসসি, অপরাজেয় বাংলা, বটতলা, হাকিম চত্বর, ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, ক্যাম্পাস শ্যাডো, বিবিএ অনুষদের সবুজ চত্বর, কাজর্ন হল, মুহসীন হল মাঠ সবই যেন পরিণত হবে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলনমেলায়।

বেলুন আর ফেস্টুন নয় মানুষের পদচারণায় মুখরিত হবে প্রিয়প্রাঙ্গণ। আর কে কাকে আগে ভালোবাসার কথা জানাবে অথবা প্রিয় মানুষটিকে আবারও আজ বলবে ‘ভালোবাসি’ সে প্রতিযোগিতাই হয়তো চলবে।

ভালোবাসা দিবসে ফুলবিক্রি: ফুল ছাড়া যেন বাঙালির বিশেষ কোন দিবস বা অনুষ্ঠানে পূর্ণতা আসে না। তাই ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে বেড়েছে ফুল বিক্রি। গতকাল রোববার থেকেই রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে ফুলের দোকানে চলছে উচড়ে পড়া ভিড়। করোনার কারণে হতাশা কাটিয়ে এবার বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় ফুল ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি। ফুরফুরে মেজাজে আছেন তারা। রাজধানীর ফুল ব্যবসায়ীরা জানান- যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের ২৯ জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। দুটি দিবসে এবার ওইসব জেলা থেকে নিয়ে আসা ২০ থেকে ২৫ কোটির টাকা মূল্যের ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে তাদের।
বিভিন্ন দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন অনেকেই শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও ফুলের কদর কমেনি সামান্যতম।