ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাস আর খুশির কোলাহলে মুখর হয়ে উঠত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাদ্য-বাজনা আর ছবি তোলায় মেতে উঠতেন শিক্ষার্থীরা। ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই বিরাজ করত উৎসবের এই আমেজ। সকাল থেকেই প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে থাকত ফল প্রত্যাশী ও তাদের বন্ধু-স্বজনদের ভিড়। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই সেই পরিচিত কোলাহল। নেই হাসির উচ্ছ্বাস, নেই দলবেঁধে ছবি তোলার আয়োজন।
রাজধানীর নামকরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনসান নীরবতা। তবে কি এবার সব খুশি বিলীন! না। এবার বদলেছে ফলের আনন্দ-উৎসবের ধরন। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসব দেখা না গেলেও খুশি আর উচ্ছ্বাসের জোয়ার দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আনন্দের বন্যা বয়েছে উত্তীর্ণদের ঘরে ঘরে। চলছে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে মিষ্টি বিতরণ পর্ব, আর আত্মীয়-স্বজদের উপস্থিতিতে ভাগাভাগি হচ্ছে আনন্দ।
গতকাল রোববার পৌনে ১২টায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ফল প্রকাশ করেন। এরপর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য থুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ বছর মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ সকল শিক্ষাবোর্ডে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন।
ফল প্রকাশের পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একেবারে সুনসান পরিবেশ। বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেও কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি মেলেনি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, করোনাকালীন বিধিনিষেধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই এবার শিক্ষার্থীরা আসেননি।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭১। অন্যতম দেশসেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮১১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৬১৯ জন, মানবিক শাখায় ৭২ জন ও বাণিজ্যিক শাখায় ১২০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
আরেক দেশসেরা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। দুই হাজার ২৩০ জন পরীক্ষার্থী মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৮০ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় এক হাজার ৬৮৭ জন, মানবিক শাখায় ১৮৬ জন ও বাণিজ্যিক শাখায় ২০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
আইডিয়াল বা ভিকারুননিসা নয়, প্রতি বছর ফল প্রকাশের পর ছোটবড়ো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে যে প্রাণবন্ত পরিবেশে উচ্ছ্বাস প্রকাশের দৃশ্য ছিল, এ বছর কলেজগুলোতে তার দেখা মেলেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্ছ্বসের দৃশ্য দেখা না গেলেও উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের ঘরে ঘরে ছিল উৎসব। শুধু ঘরে নয়; ঘরের এই উৎসব গড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খুশির মুহূর্তের ছবি তুলে অনেকেই পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগে শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুললেও এবারে ফলাফলের গ্রুপ ছবি পরিবারের সঙ্গে। কেউ মায়ের সঙ্গে, কেউ বাবার সঙ্গে, কেউ বোনের সঙ্গে কেউ ভাইয়ের সঙ্গে কেউ ছবি তুলে পোস্ট করে পাশের খবর জানিয়ে সকলের দোয়া চেয়েছেন। উত্তীর্ণদের পাশাপাছি ছবি পোস্ট করে মা-বাবা, ভাই বোন কিংবা স্বজনরাও দোয়া চেয়েছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক এম বদি-উজ-জামানের বড় ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমার বড় ছেলে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার জন্য সকলের দোয়া প্রার্থনা করি।’
রহিমা শরিফ মায়া নামের একজন মেয়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার রাজকন্যা সামিয়া তাজরীন এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। সবাই আমার রাজকন্যার জন্য দোয়া করবেন। মহান রাব্বুল আলামিন যেন তাকে হেফাজতে রাখেন এবং নিরাপদ রাখেন।’
স্বপ্না চক্রবর্তী মেয়ের সঙ্গে প্রাণ খোলা ছবি আপ দিয়েছেন। দুজনেই ভি-চিহ্ন দেখাচ্ছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন ‘ হ্যাঁ... হ্যাঁ... সে তার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেছে, অভিনন্দন আমার বাচ্চা।