logo
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:০৭
গদখালীর ফুলবাজার চাঙা
এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো

গদখালীর ফুলবাজার চাঙা

যশোরের ঐতিহ্যবাহী গদখালী বাজারে এক কৃষক ফুল বিক্রি করতে এনেছেন। ছবি ভোরের আকাশ

করোনাভাইরাসের শঙ্কা কাটিয়ে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীর বাজার এখন চাঙ্গা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ফুলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। ভালো দাম পেয়ে ফুলচাষিদের মুখে খুশির ঝিলিক ফুটেছে।


বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগমে বিধিনিষেধ থাকায় আসন্ন বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি নিয়ে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। কিন্তু তাদের সেই কপালে এখন আনন্দ খেলা করছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলচাষিরা দুই বছর পর লাভের মুখ দেখলেন।


দিবস দুটি উপলক্ষে এবার ফুলের এ ‘রাজধানী’ থেকে ২৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের টার্গেট করেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। যা গত বছরের চেয়ে আট কোটি টাকা বেশি। সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচাকেনা হয়, এর অন্তত ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী-পানিসারায় উৎপাদিত হয়। এবার ফুলের উৎপাদনও বেশি। তাই গদখালীর ফুল দিয়ে বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বতর্মানে মানভেদে প্রতিগিদখালীর ফুল পর্যন্ত। যা আগে ছিল ২শ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। আর গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের দামও ভালো বলে জানান চাষিরা। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে ফুলচাষি রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। তারা প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুলের চাষ করেন।

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ১১ ধরনের ফুল উৎপাদন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে এ বছর অল্প পরিমাণ এ ফুল বাজারে উঠেছে। এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার হচ্ছে টিউলিপ।

উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য যশোর রোডের দুই পাশে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালী। তিনদিন ধরে কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে ফুলের বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন শত শত ফুলচাষি। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থায়ীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলের দাম নিয়ে হাঁকডাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

ফুল নিয়ে আসা পানিসারা এলাকার চাষি হোসেন আলী বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর বেচাকেনা জমে উঠেছে। ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে বিক্রি তিনগুণ বেড়েছে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষেও ফুলের দাম ভালো থাকবে।

আরেক ফুলচাষি রেজা ইসলাম জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ।

‘আমরা এই দামের অপেক্ষায় ছিলাম। ফুল যাতে দেরিতে ফোটে' এ কারণে গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়। এ জন্য অবশ্য বাড়তি তিন থেকে চার টাকা খরচ হয়। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসকে টার্গেট করে আমরা ফুল চাষ করি। সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে সব খরচ উঠে লাভ হয় দ্বিগুণ।’

এদিকে গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারার ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচ শতক জমিতে ফুটেছে বিভিন্ন রঙের সাত প্রকারের টিউলিপ ফুল।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি একাংশের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সরকারের বিধিনিষেধে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের বাজার। ধারণা করা হচ্ছে, তিন দিবসে অন্তত ৩৫-৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে। এরই মধ্যে ১৮ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে সব ধরনের ফুলের দাম দ্বিগুণ। ফলে চাষিদের পুষিয়ে গেছে।