logo
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:২৫
শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতি
কড়া নাড়ছে প্রাণের মেলা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

কড়া নাড়ছে প্রাণের মেলা

লেখক-পাঠকদের সারা বছরের অপেক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের। কারণ ফেব্রুয়ারি এলেই শুরু হয় প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। ঘটে লেখক-পাঠকদের মেলবন্ধন। মাসজুড়ে চলে এ উৎসব। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবলে গত বছর সময়মতো মেলার আয়োজন করতে পারেনি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এ বছরও মেলা শুরু হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ দিন পরে। এক দিন পরই শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা। মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ সাজছে নবরূপে। চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।


গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, বইমেলা নিয়ে প্রস্তুতি অনেকটাই শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। সময় কম থাকায় যে যত দ্রুত পারেন কাজ শেষ করতে চাচ্ছেন। বাংলা একাডেমি ঘুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাছে গেলে চোখে পড়ে বাঁশ, কাঠ আর বাহারি রঙের পাত্র। চলছে বইমেলার স্টল নির্মাণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কাঠ কাটা, জোড়া দেওয়া, রং-তুলির আঁচড় আর পেরেক-হাতুড়ির টুংটাং আওয়াজ উদ্যানজুড়ে। আর দুই দিনে শেষ করতে হবে বইমেলার অবকাঠামো। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। মাঠেই কাপড় সেলাই হচ্ছে স্টলের জেন্য। নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ। মাঠে বসানো হচ্ছে লাইট, স্টলে লাগানো হচ্ছে সাইনবোর্ড। স্টলের মধ্যে শোভা পাচ্ছে নামীদামি সব লেখকের ছবি।


মেলা উপলক্ষে নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসেও। আর সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে একুশে বইমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। স্টল নির্মাণে দায়িত্বরতরা আশা করছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। সময় যেহেতু কম তাই তাড়া একটু বেশি।


এ বিষয়ে কথা হয় অভ্র প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সমা খানের সঙ্গে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সময় কম তাই সব কিছু দ্রæত করতে হচ্ছে। মেলা দেরিতে শুরু হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফেব্রæয়ারির শুরুতে মেলা শুরু হলেও তা জমে কিন্তু বসন্ত উৎসব বা ভালোবাসা দিবসের দিন। তাই এবার শুরুতে মেলা জমে যাবে বিশ্বাস। শুরুতে যদি মেলা জমে যায় সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে।


একই প্রসঙ্গে গ্রন্থকুটিরের মার্কেটিং ম্যানেজার মিন্টু কুমার দাশ ভোরের আকাশকে বলেন, মেলা নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিলাম। শেষ পর্যন্ত মেলা হচ্ছে এটা ভালো খবর। তবে আমরা চাই এটা এক মাস স্থায়ী হোক। কারণ গত বছর মেলা জমেনি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবারও যদি তেমন হয় তাহলে আমরা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হব। মেলার সময়টা যদি ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয় তাহলে প্রকাশকেরা উপকৃত হবেন।

জানা গেছে, প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ১৫ ফেব্রæয়ারি থেকে শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এবারের বইমেলায় ৪৬১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। তবে দর্শনার্থীরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত ৯টায় মেলার আলোকবাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে মেলা বেলা ১১টায় শুরু হবে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে মেলা। অমর একুশে বইমেলার গ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় আগের বছরের অক্টোবর থেকেই। অবশ্য এবার মহামারির দুর্যোগ কাটিয়ে ২০২২ সালের মেলার প্রস্তুতি শুরু করতে গিয়ে নানা টানাপড়েনে পড়েছেন প্রকাশকরা। এদিকে মেলার সময় বাড়বে কি না বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা একাডেমির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রকাশকদের দাবি আছে মেলার সময় বাড়ানোর। কিন্তু আমাদের তেমন ইচ্ছে নেই। সে কারণে মেলা শুরুর সময় ৩টার পরবর্তীতে ২টা করা হয়েছে। বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।


প্রসঙ্গত ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরো অনেকে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। পরবর্তীসময়ে ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা আর করা যায়নি। পরের বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সূচনা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’র। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়েছে।