logo
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৪৭
শিকলবন্দি রাসেল
সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম

শিকলবন্দি রাসেল

মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল মিয়া (২০)। তিন বছর আগে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর থেকেই যেদিক খুশি, ছোটাছুটি করে চলে যায় দিন। বোঝে না শীত-গরম। জামা-কাপড়ও পরতে চায় না। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে ঢিল ছোড়ে অন্যের দিকে। রাসেলের এমন অস্বাভাবিক আচরণে তিন বছর ধরে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন অসহায় বাবা-মা। ঘটনাটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রীফলগাতি গ্রামের।


রাসেল ওই গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। অর্থের অভাবে রাসেলের সঠিক চিকিৎসা করতে পারছেন তারা। সন্তানের চিকিৎসা দরিদ্র বাবার জন্য বিরাট পাহাড়ের মতো বোঝা হলেও তার প্রতি কোনো কমতি নেই তাদের। এমনকি কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না তারা।


রাসেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনের একটি ঘরে রাসেলের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কখনো ঘর থেকে বের হয়, আবার কখনো ঢোকে। আবার কখনো দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো শুয়ে থাকছে। সারাক্ষণ ছোটাছুটি আর চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্যে দিয়েই কাটছে রাসেলের জীবন।


মানসিক প্রতিবন্ধী রাসেল মিয়ার বাবা আব্দুল হান্নান জানান, দুই সন্তানের মধ্যে রাসেল বড়। তিন বছর আগে হঠাৎ করে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন রাসেল। অভাবের সংসারে যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে সন্তানের চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছেন তিনি। কিন্তু‘ কিছুতেই সে সুস্থ হয়নি। অর্থের অভাবে এখন চিকিৎসা করতে পারছেন না। এমনকি সরকারি কোনো ভাতাও পাচ্ছেন না।


আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সংসারের আমিই একমাত্র উপার্জনকারী। বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। আমার আয়ে চলে চারজনের সংসারের যাবতীয় খরচ। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবান ব্যক্তিরা আমাকে একটু সহযোগিতা করলে ছেলেটাকে সুস্থ করতে পারতাম।’


ঘটনাটি জানার কথা স্বীকার করে যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বরাদ্দ পাই না। এগুলো উপজেলা প্রশাসন করে থাকেন।’ রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘তার নাম অনলাইনে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ভাতার টাকা পাবেন।’