logo
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৫১
বেতনা নদী: ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন
আহসানুর রহমান রাজীব, সাতক্ষীরা

বেতনা নদী: ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন

সাতক্ষীরায় কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই প্রকাশ্যে বেতনা (বেত্রাবতি) নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন অবৈধভাবে বালু তুলছে তারা। এতে নদীতীরের বিভিন্ন স্থাপনা ধসের মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে ধস হয়েছে বিভিন্ন চরে। এর প্রভাব পড়তে পারে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোয়। প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব ভ‚মিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের মাটিয়াডাঙ্গা বাজার ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এর পূর্বপাশে বেতনা নদীতে রাখা ড্রেজার মেশিন ঠিক করছেন মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত জিফার সরদারের ছেলে আইয়ুব আলী। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘লেখেন লেখেন, প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ এসে নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারে না।’
এ সময় এক সহযোগীকে ডেকে আইয়ুব আলী বলেন, ‘এই ফিরোজ ভাইকে ফোনে ধরিয়ে দে, ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলুক।’


পরে কথা বলব জানিয়ে বালু কিনতে এসেছি জানালে তিনি এবার সহজ হয়ে বলেন, ‘আমরা নদী থেকে বালু তুলে সাড়ে তিন টাকা থেকে চার টাকা ফুট দরে বিক্রি করি। সরাসরি পাইপের মাধ্যমে পুকুর বা জমি ভরাট করে থাকি। এ ছাড়া বালু তুলে নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্ত‚প করে রাখি, পরে সেখান থেকে বিক্রি করি।’


তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাঁধনডাঙ্গা রাস্তায় ফিলিংয়ের সব বালু এখান থেকে সরবরাহ করেছি। আশপাশ গ্রামের বেশ কয়েকটি পুকুর ও স্থানীয় একটি ঈদগাহ মাঠ ভরাটে এখানকার বালু দিয়েছি। আপনি চাইলে এখান থেকে ট্রাক বা ট্রলিতে করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের চার টাকা করে ফুট দেওয়া লাগবে।’


বালু তুলতে প্রশাসনের অনুমতি লাগে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আইয়ুব আলী বলেন, ‘না, আমাদের ভাই সবকিছু দেখাশোনা করেন। যে কারণে অনুমতি লাগে না।’


স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরব ভ‚মিকার কারণে সংঘবদ্ধ চক্রটি নদীর কয়েকটি স্থানে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই তারা বেতনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে। এতে নদীপাড় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।


নাম প্রকাশ করার না শর্তে ধুলিহর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা বালু তুলছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন সমানতালে বালু তোলা হচ্ছে। এতে তীরবর্তী এলাকাগুলো ভাঙনের হুমকিতে হয়েছে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরে সদর সহকারী কমিশনারকে (ভ‚মি) খোঁজ নিতে বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা সঠিক হলে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করার কথা বলেছি।’


সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার সুমনা আইরিন বলেন, ‘বেতনা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছেÑ এমন তথ্য জানতে পেরে বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য ধুলিহর ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে মাটিয়াডাঙ্গা এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনা সঠিক হলে তিনি সংশ্লিষ্টদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বলবেন। না শুনলে পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’