ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতেই দৃষ্টি কাড়বে রঙিন গ্রাফিতি, কিছু গাছের টব, আলমারি আর কিছু চেয়ার-টুল। এই নিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন ছিমছাম ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’। অথচ কিছুদিন আগেও এই স্থান ছিল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। জায়গাটিকে পরিচ্ছন্ন করে এই লাইব্রেরিটি বসিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার জায়গা থেকে এই লাইব্রেরিটি গড়ে তুলেছেন। সৈকত বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার জায়গা থেকে এই লাইব্রেরিটি গড়ে তুলেছি। এই সময়ে এসে উপলব্ধি করছি আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, সমান্তরালভাবে আমাদের চিন্তা-চেতনা নৈতিকতার উন্নয়ন প্রয়োজন। দেশ আগাবে তবে মনশীলতার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে সত্যিকারার্থে দেশ আগাবে না। এই সময়ে আমার মনে হয়েছে, কেউ যদি বই পড়ে অন্তত তার চিন্তা বুদ্ধি বিবেকের জায়গাটা কোমল থাকে, সুন্দর থাকে। চিন্তার বিকাশের বড় হাতিয়ার হলো বই। এই বইয়ের জন্য উন্মুক্ত কিছু করা দরকার।
উন্নত বিশ্বে রাস্তার ধারে কিংবা পার্কের সবুজ ছায়াতলে বই পড়ার প্রচলন রয়েছে। ছোটবেলায় কাকার একটি ছবি দেখেছিলাম বিদেশে রাস্তার পাশে লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। ছোটবেলা থেকেই উন্মুক্ত লাইব্রেরি করার চিন্তা করেছি’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি ঐতিহাসিক জায়গা। যেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ যে কেউ চাইলে এখানে বসে চায়ের কাপের আড্ডায় বই পড়ে সময় পার করতে পারবেন।
উদ্যোগটি নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’ বাংলাদেশের জ্ঞান চর্চার পরিসরে নতুন কোনো ধারণা না হলেও খুব বেশি পরিচিতও নয়। বাংলাদেশের জ্ঞানচর্চার কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, জ্ঞানচর্চার প্রক্রিয়া কোনো না কোনো কাঠামোয় আবদ্ধ। আবদ্ধ কাঠামোয় জ্ঞানচর্চার একটা অসুবিধা হলো এই জ্ঞানচর্চায় সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। ফলে জ্ঞানচর্চা যে সর্বসাধারণের জন্য হওয়া উচিত ছিল তা সবসময়ই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। সেই জায়গা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো একটি ঐতিহাসিক জায়গায় ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’র প্রচলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; যা গণমানুষের সাথে জ্ঞানের সংযোগ ঘটাবে এবং জ্ঞান আবদ্ধ না থেকে উন্মুক্ত ধারণা হিসেবে দেশব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।
লাইব্রেরিতে তিন ধরনের বই থাকবে বলে জানান সৈকত। তিনি বলেন, উন্মুক্ত লাইব্রেরিটিতে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশের ইতিহাস/বিদেশি সাহিত্য/বাংলা সাহিত্য এই তিন ক্যাটাগরির বই থাকবে। এই চর্চাটি শুরু করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-এক জায়গায় করব। সারাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে চাই। যাদের সুযোগ আছে তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে তারা যেন মানুষকে বই পড়ার সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে আসেন।