সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট। পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রতিবন্ধী তামান্না আক্তার নূরা। হঠাৎ তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন। তা রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি? ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না।
ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তামান্না। কাঁদতে থাকেন অঝোরে। অভিনন্দন জানিয়ে তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তুমি কাঁদছো কেন? কান্না থামাও।’
কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না। এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থী তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ আবেদন করতে বলেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে তামান্নাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হোয়াটসঅ্যাপে চার মিনিটের ওই কথোপকথনে তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সাহস হারাবে না। সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।’
এর আগে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তামান্নার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানা। ফোন রিসিভ করতেই তামান্না শোনেন, ‘আমি লন্ডন থেকে শেখ রেহেনা বলছি। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি? এ কথা শোনার পরও কান্না করেছিলেন তামান্না।
এ সময় শেখ রেহানা বলেন, ‘কেঁদো না। টানা ভালো রেজাল্ট করায় তোমাকে অভিনন্দন। তোমার সংগ্রামের কথা শুনেছি। তুমি খুব সাহসী। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা দুই বোন বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমাকে সহযোগিতা করে যাব। যারা সাহস রেখে চলে তারা কখনও হেরে যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানার ফোন পেয়ে তামান্নার আত্মবিশ্বাস এখন চূড়াতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে বিএসসি ক্যাডার হতে চান। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে চান।
তামান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা দুইজনই বলেছেন আমার স্বপ্নপূরণে পাশে থাকবেন। তাদের ফোন পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। আমি কেঁদেই ফেলেছিলাম। তারা দুজন আমাকে ফোন করবে এটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমার এখনও স্বপ্ন মনে হচ্ছে।’
এদিকে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তামান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত আবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘তামান্নার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা কথা বলেছেন। সবার দোয়ায় তামান্নার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আশা করি।’
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে হলেন তামান্না আক্তার নূরা। তামান্নার বাবা স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদরাসার (নন এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন শিল্পী গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে তামান্না সবার বড়।
জন্মগতভাবেই তামান্নার দুই হাত ও এক পা নেই। শরীরে শুধু একটিমাত্র পা-ই তার সম্বল। এই এক পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
এর আগে ২০১৯ সালে ঝিকরগাছার বাঁকড়া জেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তামান্না। পান জিপিএ-৫। এর আগে জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তামান্না। অদম্য এ মেয়েটি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২০১৩ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও।