logo
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৩৩
সবার নজর বঙ্গভবনে
রাজন ভট্টাচার্য ও শাহীন রহমান

সবার নজর বঙ্গভবনে

নির্বাচন কমিশন থেকে বিদায় নিয়েছে আগের কমিশন। নতুন ইসি গঠনে যোগ্যব্যক্তিদের বাছাইয়ের কাজ চলমান। সার্চ কমিটি এখন পর্যন্ত তালিকা চূড়ান্ত না করলেও আপাদত সবার দৃষ্টি এখন এই কমিটিকে ঘিরেই। বিশেষ করে কাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনার হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনাও।

বিএনপিসহ বিরোধী জোট সংলাপে অংশ নেয়নি, সার্চ কমিটির কাছে নামের প্রস্তাবও পাঠায়নি। তবে এ নিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যেও আছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। কারণ নতুন ইসির অধীনের হবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।


এদিকে সার্চ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী প্রস্তাবিত নাম থেকেই ইসি গঠনে তালিকা চূড়ান্ত করা বাধ্যতামূলক নয়। রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে আসা ৩২২ জনের নামের বাইরেও কমিটি মনে করলে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম যুক্ত করতে পারে। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

হাতে সময় থাকায় বিএনপিসহ বিরোধেী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নামের তালিকার জন্য আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে চায় সার্চ কমিটি। তবে কমিটির দেওয়া নামের তালিকা থেকেই পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করে ইসি গঠন করবেন আইনে এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পর রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার আগে তারা ইসিতে দায়িত্ব পালন করতে চান কিনা এ ব্যাপারে সম্মতি নেবে সার্চ কমিটি। কেউ দায়িত্বে অপারগতা প্রকাশ করলে এক্ষেত্রে নামের তালিকাতেও পরিবর্তন আসবে।

সব মিলিয়ে নতুন ইসি গঠনে সবার নজর এখন সার্চ কমিটি ও রাষ্ট্রপতির দিকেই। সার্চ কমিটি ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে আগামী দু’একদিনের মধ্যেই নামের তালিকা চূড়ান্ত করলেও রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে আরেকটু অপেক্ষা করতে কমিটি। এই সময়ের মধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে আবারো নাম পাঠাতে আহ্বান জানানো হবে। তবে চূড়ান্ত তালিকা জমা দেওয়া হবে ২৪ তারিখের মধ্যেই।

কমিটির পক্ষ থেকে ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার পর বাছাই করে পাঁচজনকে নতুন ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সার্চ কমিটি গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এরপর সার্চ কমিটি কাজ শুরু করে।

কয়েক দফা আলোচনা শেষে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া ৩২২ জনের প্রাথমিক নামের তালিকা সোমবার রাতে প্রকাশ করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। আমলাদের প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশিত তালিকায় যেমন রয়েছে কিছু আলোচিত নাম। আবার রয়েছে অখ্যাত অনেক ব্যক্তির নামও।

তবে জানা গেছে, আলোচিত এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠনে আলোচনা শুরু হয়েছে জোরেশোরে।

আইন অনুযায়ী ইসি বাছাইয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মেয়াদ ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জানা গেছে, সার্চ কমিটি প্রাথমিক তালিকা থেকে বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২৪ তারিখ মেয়াদের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট দেওয়া হবে।

সার্চ কমিটির প্রকাশিক তালিকায় এমন কিছু নাম রয়েছে যেগুলো নিয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে প্রায় সব মহলেই। আমলা এবং সাবেক বিচারপতিদের তালিকা থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাউকে বাছাই করা হতে পারে। এর বাইরে সেনাবাহিনী, এমনকি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মরত আছেন এমন ব্যক্তিরা আলোচনায় রয়েছেন।

বিশেষ করে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার কয়েকজন কমিশনার হিসেবে ইসিতে নিয়োগের জন্য আলোচনায় রয়েছে। এই তালিকায় নির্বাচন কমিশনে কাজ করা একজন অতিরিক্ত সচিব এবং একজন যুগ্ম সচিবের নাম ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে।

এছাড়া সাবেক একজন পুলিশ প্রধানের নাম আলোচনায় রয়েছে। সাবেক একজন নারী তথ্য কমিশনারের নাম আছে আলোচনায়। বিশিষ্টজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাহসী মানুষ হিসেবে সাবেক একজন বিচারপতিও নতুন ইসিতে জায়গা পেতে পারেন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে বিদায় নিয়েছেন কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। যারা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সদ্য সাবেক এবং আগের কাজী রকিবউদ্দিন কমিশনের গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে সদ্য সাবেক নির্বাচন কমিশনের গত ৫ বছরের কর্মকাণ্ডে প্রায় সব মহল থেকে সমালোচনা উঠেছে। এমনকি তারা কমিশন থেকে বিদায় নেওয়ার পর তাদের বিচারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে।

গত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপি অংশ নিলেও এবার তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে। একইভাবে সার্চ কমিটির কাছে নামের প্রস্তাব দেয়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করা অর্থহীন। বিএনপির ছাড়াও ইসির নিবন্ধিত আরো ১৩টি রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে নামের প্রস্তাবনা দেয়নি।

মন্ত্রিপারিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, গত সোমবার সার্চ কমিটির কাছে নাম জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই সময়ের পর কমিটিতে নাম জমার সুযোগ নেই। ফলে প্রাথমিক নামের তালিকা থেকেই যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা হবে।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার জানা গেছে, বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকে নাম পেতে আরেকটু অপেক্ষা করবে সার্চ কমিটি।

এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার কমিশন বিদায় নিলেও কমিশনে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে না। তবে জানা গেছে, সাংবিধানিক শূন্যতা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দ্রুতই কমিশনে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তা আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির আগেই নতুন কমিশন গঠন করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।