logo
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:০০
একটি সেতুর জন্য ৫০ বছর অপেক্ষা
শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী

একটি সেতুর জন্য ৫০ বছর অপেক্ষা

ব্রিজ না থাকায় স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো বানিয়ে তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। ছবি ভোরের আকাশ

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে রয়েছে বুড়ি তিস্তা নদীর বুদুর ঘাট। এই ঘাটে স্থায়ী কোনো সেতু না থাকায় ছয় গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো।

বিকল্প পথ না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই প্রায় ৫০ বছর ধরে গ্রামবাসীদের যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয়রা প্রতিবছরই নিজস্ব উদ্যোগে সাঁকোটি মেরামত করে থাকেন। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান চান ছয় গ্রামের বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে এই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে।

কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর থেকে তাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুরা এই সাঁকো দিয়ে স্কুলে গেলে তাদের বাবা-মা ভয়ে থাকেন। একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই গ্রামের মানুষদের।

বর্ষায় কলার ভেলা আর শুষ্ক মৌসুমে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই নদীর দুপাড়ের মানুষের একমাত্র ভরসা। ভোগডাবুড়ি ও বড়শশী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়ি তিস্তা নদীটি। নদীর এপাড়ে শব্দিগঞ্জ, গোসাইগঞ্জ ও আনন্দবাজার ওপারে সর্দ্দারপাড়, জালিয়াপাড়া ও চিলাপাড়া গ্রামের মানুষের অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচলের ফলে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এমনটা চলছে বছরের পর বছর।

নদীর এপাড়ে রয়েছে শব্দিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোসাইগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কারেঙ্গাতলী উচ্চ বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করতে বুদুরঘাটের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকোতে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। ইউনিয়ন থেকে সংসদ নির্বাচনের সময় আশ্বাস দেওয়া হয় বুদুরঘাটে সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই বুকভরা আশা নিয়ে দুই পাড়ের মানুষ আজো দিন গুনছেন।

শব্দিগঞ্জ গ্রামের হবিবর, অমিনুল ও তাইজদ্দনি বলেন, নদীর ওপাড় থেকে শিশু ছেলেমেয়েরা নড়বড়ে সেতু দিয়ে স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়া করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. কাজল বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই এলাকার মানুষ একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ তাদের কথা শোনেনি।’

বড়শশী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মনজু ইসলাম বলেন, ‘নদীর দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একটি সেতু স্থাপনের। ট্রেন, বাস ধরতে সেতু না থাকায় এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি নিয়ে অবগত নই। তবে বিষয়টি অবগত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার জানান, উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে তালিকা দেওয়া হলে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে। আর নতুন চেয়ারম্যান এ বিষয়ে তালিকা করে পাঠালে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।